ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর পর্যটন সম্ভাবনার অঞ্চল। শেরপুরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিত। শেরপুরের পাশাপাশি জামালপুর জেলায়ও বেশ কয়েকটা ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে। একবার ভ্রমনে গেলে আপনি এই দুই জেলা একসাথে ভ্রমন করে আসতে পারবেন। জামালপুর এবং শেরপুর জেলার পর্যটন স্পট,যাতায়াত ব্যবস্থা,খাবার,হোটেল ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার আগে চলুন জেনে নেই জেলা জামালপুর ও শেরপুর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশাসনিক তথ্য।
জামালপুরঃ
জামালপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাংশের অঞ্চল, যা এখন ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম তীরে জেলা সদরের অবস্থান। কৃষি পণ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র জামালপুর। জেলাটিতে রেল সংযোগ রয়েছে। তাছাড়া ঢাকার সাথে সড়ক পথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান। দেশের সবথেকে বড় সার কারখানা এখানেই। জামালপুর জেলা ৭টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত। জামালপুর দেশের অন্যতম পুরাতন জেলা। জেলার বুক চিরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাই নদী বয়ে গেছে। জামালপুরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ও গারো পাহাড়, কুড়িগ্রাম জেলা, পূর্বে শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলা এবং পশ্চিমে যমুনা নদীর তীরবতী সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা।
শেরপুরঃ
শেরপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। শেরপুর জেলা পূর্বে জামালপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। শেরপুর শহর দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১৯৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলা। শেরপুর জেলায় উপজেলা রয়েছে ৫টি। মহান মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর ও শেরপুর জেলা ১১ নং সেক্টরের অধীন ছিল।

জেলা দুটির দর্শণীয় স্থান সমূহ-
জামালপুরঃ
১.দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলস।
২.লাউচাপড়া পিকনিক স্পট-
জায়গাটি জামালপুর জেলার অধীনে হলেও যাওয়ার সহজপথ হলো শেরপুর হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুরে যায় ড্রীমল্যান্ড পরিবহনের বাসে করে যেতে পারবেন। ভাড়া ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে। শেরপুর থেকে বাসে বকশীগঞ্জের ভাড়া ২৫-৩০ টাকা।
৩.গান্ধি আশ্রমঃ
মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাসহাটিয়া গ্রামে গান্ধি আশ্রমের অবস্থান।
৪.দারকি গ্রামঃ
মাছ ধরার বিশেষ এক ধরনের ফাঁদের নাম “দারকি”। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার হাতিজা গ্রামের নাম বদলে হয়েছে এই দারকি গ্রাম!
৫.যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানাঃ
দেশের সর্ববৃহৎ সার কারখানা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত।
শেরপুরঃ
১. গজনী অবকাশ কেন্দ্র , ঝিনাইগাতি।
২. মধুটিলা ইকোপার্ক, নন্নী, নালিতাবাড়ি।
৩. অর্কিড গার্ডেন পর্যটন প্রকল্প, কলাবাগান, শেরপুর।
৪. জরিপ শাহের মাজার, বারদুয়ারি মসজিদ , গড় জরিপার দুর্গ, শ্রীবরদি, শেরপুর।
৫. হজরত শাহ কামালের মাজার ,কসবার মুঘল মসজিদ ,নয় আনী জমিদার বাড়ি, শেরপুর।
৬. সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান, ঝিনাইগাতি।
৭. বারোমারি খ্রিস্টান মিশন, নালিতাবাড়ি।
৮. নাকুগাও স্থল বন্দর, নালিতাবাড়ি।
৯. বন্যহাতির অভয়ারন্য নয়াবাড়ির টিলা।
১০.নালিতাবাড়ির বিখ্যাত রাবারড্যাম।
১১.লস্কর বারী মসজিদ (১৮০৮ খ্রিস্টাব্দ)।
বিশেষ নোটঃ
আমরা বগুড়া থেকে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তাই ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন তার একটা যুক্তিযুক্ত উপায় বিভিন্ন মাধ্যম দেখে ও পর্যালোচনা করে বের করেছি। তাই ভাড়া ও গাড়ীর সময়ের তারতম্য হতে পারে তবে তা সামান্যই হবে।

যাতায়াত ব্যবস্থা ও ভাড়া-
বাসযোগেঃ
এডিবির আর্থিক সহায়তায় ফিডার রোড নির্মিত হওয়ায় ঢাকার সাথে জামালপুর ও শেরপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে চার ঘন্টায় জামালপুর এবং সাড়ে চার ঘণ্টায় শেরপুর পৌঁছানো যায়। ঢাকা থেকে জামালপুরের দুরত্ব ১৮০ কিঃমি এর মতো আর শেরপুরের দুরত্ব ১৯৮ কিঃমি । এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়াত খুব সহজ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে। ঢাকা থেকে এসে আপনি জামালপুর নামতে পারেন, জামালপুরের স্পটগুলো ঘুরে শেরপুর যেতে পারেন। কিংবা শেরপুর থেকেও জামালপুর ব্যাক করতে পারেন। আসলে এটা আপনার ইচ্ছা। আসলে সব বাসই জামালপুর শহর হয়ে শেরপুর যায়। বাস কোম্পানী গুলোর মধ্যে বধুয়া, শাহীমনি, সোনার বাংলা, এসএ পরিবহন ও স্পেশাল ড্রীমল্যান্ড সার্ভিস উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে এসি, নন-এসি, ডিলাক্স, সাধারণ এসবের সিট ভাড়া পড়বে ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে।
মহাখালী,আব্দুল্লাহপুর সহ ঢাকার কয়েকটি স্ট্যান্ড থেকে বাস ছেঢ়ে যায় জামালপুর ও শেরপুরের উদ্দেশ্যে। গুলিস্তান বাইতুল মোকাররম মার্কেট এর সামনে বা ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়াম গেইট থেকে সরাসরি বিকাল ৩-৪টায় বেশ কিছু ভাল বাস ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা। বেশীরভাগ বাস শেরপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যায়, আবার কিছু বাস শহরের ভেতরে নিউমার্কেট পর্যন্ত যায়। এক্ষেত্রে বাস টার্মিনাল এ নামলে রিকশা নিয়ে শহরের ভিতরে যেতে হবে,ভাড়া ১৫-২০ টাকা। অটোরিক্সা দিয়েও যেতে পারেন, ভাড়া ৫-১০ টাকা জনপ্রতি।
ট্রেন যোগেঃ
ঢাকা থেকে ট্রেন যোগেও আসতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে জামালপুর এসে নামতে হবে। শেরপুর যাবার জন্য জামালপুর শহর থেকে সড়ক পথ ধরতে হবে।
থাকার ব্যবস্থা ও খরচ-
জামালপুর থাকতে চাইলেঃ
এখানে ভিআইপিদের জন্য জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ রয়েছে। আর আমার আপনার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ভালো,মাঝারী ও নিম্নমানের হোটেল। জামালপুরে থাকতে চাইলে জেলা শহরেই থাকা উত্তম। কারন উপজেলা গুলোতে তেমন ভালো থাকার ব্যবস্থা নাই। শহরের হোটেল গুলোতে ২ জন একরুমে থাকতে পারবেন এমন রুমের নন-এসি ভাড়া ৪০০-১২০০ টাকা, এসি ৯০০-২০০০ টাকার মতো।
শেরপুর থাকতে চাইলেঃ
যদি শেরপুরে রাত্রিযাপন করতে চান তবে শেরপুর জেলা সদরেই থাকতে হবে। কারণ সীমান্তবর্তী এলাকার কোনো স্পটেই রাত্রীযাপনের কোনো ব্যবস্থা বা অনুমতি নেই। এছাড়া নিচে উল্লেখিত স্থানগুলোতে এমনকি ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ি,শ্রীবর্দী এসব সীমান্তবর্তী উপজেলা সদরে রাত্রিযাপন করার মতো কোনো ভালো আবাসিক হোটেল নেই। শেরপুর জেলা শহরে হাতে গোনা তিনটি-চারটা ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের রুম ভাড়া নন এসি ডাবল ৪০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এসি রুমের ভাড়া ৮০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। আর ভিআইপিদের জন্য জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ও এলজিইডির রেস্ট হাউজ রয়েছে। ঝিনাইগাতী ডাকবাংলো অথবা বন বিভাগের ডাকবাংলোতেও থাকতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে অগ্রীম অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজের প্রতিরুম এক রাতের জন্য ভাড়া ৫০ টাকা, এলজিইডির প্রতিরুম ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং সার্কিট হাউজের প্রতিরুম ৪০০ টাকায় ভাড়া নেয়া যায়। তবে ওই রেস্ট হাউজে সরকারি কর্মকর্তারা নামমাত্র মূল্যে দিয়ে রাত্রীযাপন করতে পারেন।
খাওয়া সুবিধাঃ
জামালপুর ও শেরপুরে খাবারের সমস্যা নাই। দুটি জেলা শহরে কয়েকটি বিখ্যাত খাবার হোটেল আছে। হোটেল শাহজাহান,শাহী খানা খাজানা,বাগান বাড়ি রেস্টুরেন্ট,হোটেল আহার কিংবা হোটেল প্রিন্স শেরপুরের বিখ্যাত। আপনার সুবিধামতো খাবার খেতে পারবেন। খাবারের দাম স্বাভাবিক। শহরের বেশ কয়েকটি হোটেল অর্ডার দিলে পার্সেল সরবরাহ করে।
তবে সীমান্ত এলাকায় ভালো মানের খাবার হোটেল পাবেন না। তবে পেট চালিয়ে নেবার মতো খাবার হোটেল মাঝেমধ্যে পাবেন।
অভ্যন্তরীন যানবাহনঃ
জেলা দুটির অভ্যন্তরে পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরতে সিএনজি,অটোরিক্সা পাবেন। রিজার্ভ নিলে সবচেয়ে সুবিধা হবে। বাসও চলে বিভিন্ন রুটে। একবার রিজার্ভ করলে বেশ কয়েকটা স্পট ঘুরতে পারবেন এমনভাবে পরিকল্পনা করুন। আমি এ কথাটা বারবারই বলি গাড়ী রিজার্ভ করার ক্ষেত্রে দরদাম করবেন, নইলে ঠকবেন। নিজের মতো করে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন এবং ভ্রমণ উপভোগ করুন।
ঢাকা থেকে আসা,থাকা,খাওয়া সবকিছুর সন্ধান তো দিলাম এবার আমাদের চোখে জামালপুর-শেরপুর অভিযান দেখুন!
আগেই বলেছি অামরা বগুড়া থেকে ভ্রমনে গিয়েছিলাম। তাই সড়ক পথে টাঙ্গাইল হয়ে ঘুরপথে যাবার চিন্তা মাথায় আনিনি। বেছে নিয়েছিলাম শর্টকাট রাস্তা। ওহ শুধু রাস্তা না নদীও ছিল! আমরা সারিয়াকান্দী কালিতলা ঘাট থেকে জামতৈল ঘাট হয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা সদর দিয়ে জামালপুর সদরে প্রবেশ করেছিলাম। বগুড়ার সারিয়াকান্দী উপজেলার কালিতলা ঘাট থেকে প্রতিদিন বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টায় সরকারীভাবে দুটি ফেরি সার্ভিস চালু আছে ওপাশের জামতৈল ঘাট পর্যন্ত। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা, বিশাল যমুনা নদী পার হতে সময় লাগবে দুই ঘন্টার মতো। এছাড়া দিনের অন্য সময় যেতে চাইলে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারবেন। ১৫-২০ জন হলে ভাড়া পড়বে ১০০ টাকার মতো জনপ্রতি। যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো। একটু অপেক্ষা করলেই ১৫-২০ যাত্রী হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন বিকেল ৪টার পরে কোন নৌকা বা ফেরী ঘাট থেকে ছেড়ে যায় না। কারন সন্ধ্যা বা রাতে নদী পথে নৌকা চলাচল নিরাপদ নয়।
জামতৈল যমুনার পূর্বপাশে হলেও এটা বগুড়া জেলার অন্তর্গত আর মাদারগঞ্জ জামালপুরের একটি উপজেলা। জামতৈল ঘাটে নামার পর সেখানেই ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা পাবেন মাদারগঞ্জ সদরে যাবার জন্য,ভাড়া নিবে ২০-৩০ টাকা,সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মতো। মাদারগঞ্জে থাকা বা খাবারের তেমন কোন ভালো ব্যবস্থা নাই। মাদারগঞ্জ থেকে কোন বাস জামালপুর চলাচল করে না। ভরসা করতে হবে সিএনজি এবং চার চাকার হিউম্যান হলারের উপর। সিএনজিতে ভাড়া ৬০-৭০ টাকা আর হিউম্যান হলারে ৩০-৪০ টাকা নিবে।

জামালপুর শহরে পৌছাতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মতো। জামালপুরের আশপাশটা দেখে একরাত থেকে আমরা পরের দিন ভোরে রওনা হলাম শেরপুরের দিকে। জামালপুর শহরটা ব্রক্ষপুত্র নদীর তীরে। এই নদীর উপর একটা সুন্দর ও বেশ বড় সেতু নির্মিত হয়েছে,নাম ব্রক্ষপুত্র সেতু। সেতুর উপর থেকে শেরপুর যাবার জন্য বাস,সিএনজি,অটোরিক্সা পাবেন। আমরা গিয়েছিলাম অটোরিক্সায় ভাড়া নিয়েছিল ২৫ টাকা,সময় লেগেছিল ৩০ মিনিটের মতো। অটোরিক্সা শহর পার হয়ে আমাদের শাপলা চত্বরে নামিয়ে দিয়েছিল। জায়গাটার নাম সম্ভবত খোয়ারপাড়।
জামালপুর-শেরপুর ট্যুরে ভাগ্যক্রমে বেশ কয়েকজন শুভাকাঙ্খী জুটেছিল আমাদের, মূলত জামালপুর পৌছার পর তাদের ডিরেকশনেই আমরা চলেছি। ধন্যবাদ দিয়ে তাদের ছোট করতে চাই না,কারন তারা আমাদের জন্য যা করেছে তা এক কথায় অনেক,অনেক করেছে। এর মধ্যে ফরহাদ, নিজাম, গাজী এবং খায়রুলের কথা না বললেই নয়।
শাপলা মোড় থেকে আমরা সিএনজিতে করে শ্রীবর্দী গিয়েছিলাম। সময় কমই লাগে,ভাড়াও কম। বাসেও যেতে পারবেন। সেখান থেকে অটোরিক্সা রিজার্ভ নিতে পারবেন গজনী অবকাশ কেন্দ্র হয়ে মধুটিলা ইকোপার্ক পর্যন্ত। চাইলে সেই অটোতেই আবার ফিরতে পারেন শ্রীবর্দী,সেখান থেকে শেরপুর। অন্য পথেও সরাসরি ঝিনাইগাতী হয়ে গজনী আসতে ও শেরপুর ফিরতে পারবেন,এতে সময় বাঁচবে। ঝিনাইগাতী পর্যন্ত লোকাল বাসে আসতে পারবেন। আমাদের শ্রীবর্দী যাবার অন্য কারন ছিল। তাছাড়া সিএনজি, অটোরিক্সাও পাবেন। আমরা মধুটিলা ইকোপার্ক পর্যন্ত যাবার চুক্তিতে রিজার্ভ নিয়েছিলাম, ভাড়া নিয়েছিল ৮০০ টাকা। এই যাত্রা পথে আপনি অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। মসৃন উচুনিচু পিচঢালা পথ। দুপাশে বিভিন্ন গাছের ঘন বাগান,মাঝে মধ্যে উকি দেবে দুরের পাহাড়। ড্রাইভারকে বললে মাঝে মধ্যে গাড়ী থামিয়ে আপনাকে প্রকৃতির স্বাদ নিতে দেবে। চলতি পথে দেখবেন রাস্তার দুপাশে খোলা তারের বেড়া! এই বেড়া দেয়া হয়েছে রাতে বন্যহাতির আক্রমন থেকে মানুষের জান-মালকে রক্ষা করবার জন্য। রাতে এই তারে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া থাকে।

এভাবে প্রকৃতির নেশায় ডুবে থাকতে থাকতে কখন যে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে চলে আসবেন বুঝতেই পারবেন না!
টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়। গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতিতে। এখানে একই সাথে পাহাড়, হ্রদ, বন-জঙ্গল ও হাজারো পাখির কলরব পাবেন। পাহাড়ে সারি সারি শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারী, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস সহ আরো নাম না জানা হরেক রকমের পাহাড়ি গাছ, বিভিন্ন পাহাড়ি ফুল, ছায়া ঢাকা পরিবেশ পাবেন। যেন বিশাল ক্যানভাসে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়। এখানে একটি বেশ উচু ওয়াচ টাওয়ার আছে। টাওয়ারটি থেকে পুরো গজনী এক পলকেই দেখতে পারবেন, দারুন ভিউ পাওয়া যায় ওয়াচ টাওয়ারটা থেকে। অবকাশটির ভিতরে বেশ চিত্তবিনোদনমূলক বেশ কিছু আইটেম আছে। টিকিট কেটে সব উপভোগ করতে পারবেন। এমন পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন গজনী গারো পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। জেলা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত এ অবকাশ কেন্দ্রটি থেকে ভারতের মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়গুলো আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে! তবে সাবধান সীমান্তের কাছাকাছি ঘেষার চেষ্টা করবেন না, বিপদ হতে পারে,অামাদের যেতে দেয়া হয়নি। এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস,তাই তারা বিব্রত হয় এমন কাজ করবেন না।
এবার মধুটিলা ইকোপার্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ!
গজনীর চেয়ে মধুটিলা ইকো পার্ক আমার ভালো লেগেছে। ভারত সীমান্ত ঘেষা নালিতাবাড়ী উপজেলায় এই পার্কটির অবস্থান। এখানেও টিকিট কেটে ঢুকতে হবে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ রয়েছে এখানে। বেশ কয়েকটি উচু উচু টিলার সমন্বয়ে গঠিত এই পার্ক,টিলাগুলো এতো সবুজ ও সুন্দর যা আপনাকে ভাষায় বোঝানো যাবে না! ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মনোরম পিকনিক স্পটটি গড়ে তোলা হয়েছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওই পিকনিক কেন্দ্রে প্রতিবছর প্রচুর ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণ হয়। এখানেও গজনীর মতো অনেক আইটেম রয়েছে,যা আপনার মনকে আনন্দিত করবে।

এখানেও সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে,এতে করে আপনি পুরো পার্কটি একনজরেই পুরোটা দেখতে পারবেন। পাহাড়ে চড়ার জন্য বেশ কয়েক জায়গায় সিড়ির ব্যবস্থা আছে। পার্কের ভিতরে অনেক জীব-জন্তুর ভাস্কর্য রয়েছে। শো-পিছ কেনাকাটা করার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। এখানে আপনি শেরপুর থেকে সরাসরি আসতে পারবেন, এজন্য আপনাকে লোকাল বাসে করে নালিতাবাড়ীর নন্নী পর্যন্ত আসতে হবে। এরপর রিক্সা বা অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি করে পার্ক পর্যন্ত আসবেন। ফিরবেন একই উপায়ে।

কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ!
এই উপদেশ গুলো গজনী ও মধুটিলা ইকোপার্ক সহ পুরো পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী এলাকার জন্য প্রযোজ্য;
১.পাহাড়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। কথা বলারও দরকার নাই।
২.একা হয়ে পাহাড়ে ঘুরবেন না। সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডের দিকে যাবেন না।
৩.মাদক কারবারি বা দালালদের থেকে দূরে-বহুদূরে থাকুন।
৪.সন্ধার আগেই পাহাড়ি এলাকার স্পট গুলো ত্যাগ করুন।
৫.স্থানীয় কারো সাথে তর্কে জড়াবেন না।
৬.মধুটিলা ইকোপার্ক ও গজনী অবকাশ কেন্দ্র বেশ নির্জন। তাই সাবধানে থাকুন। এসব স্থানে ছিনতাইয়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

উপরে মূলত শেরপুর-জামালপুরের প্রধান দুটি পর্যটন স্পট নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি অন্য স্পটগুলোও নিজের মতো করে সময় সাজিয়ে নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। অবশ্যই ভালো লাগবে আপনার। গজনী ও মধুটিলায় প্রতিবছরের শুরুতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর মানুষ শিক্ষা সফরে আসে। তাছাড়া সারা বছরই মোটামুটি পর্যটকের আনাগোনা থাকে এখানে।
এবার ফেরার পালাঃ

ঢাকায় ফিরতে চাইলে-
প্রথমে আপনাকে শেরপুর বা জামালপুর শহরে আসতে হবে। তারপর স্ট্যান্ডে গিয়ে টিকেট কাটতে হবে। যথেষ্ট বাস পাবেন ঢাকায় ফেরার জন্য। চাইলে জামালপুর থেকে ট্রেনেও ঢাকা ফিরতে পারেন।
বগুড়ায় ফিরতে চাইলে-
যেভাবে সারিয়াকান্দী হয়ে এসেছেন সেভাবেই ফিরতে হবে। তবে অবশ্যই বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে জামতৈল ঘাটে পৌঁছাতে হবে, কারন চারটার পরে আর কোন নৌযান ঘাট থেকে সারিয়াকান্দীর কালিতলা ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে না।
মনে রাখবেনঃ
প্রত্যেকটা পর্যটন এলাকা আমাদের জাতীয় সম্পদ। অতএব এর ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। পরিবেশ পরিস্কার রাখুন। বেড়াতে গিয়ে সব কিছু চাহিদামতো রাজকীয় পাবেন এ চিন্তা এড়িয়ে চলুন! প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষের সহযোগীতা নিন,স্থানীয় মানুষদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। বিপদে পড়লে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগীতা নিন। ভ্রমন করুন, দেশকে জানুন।
আপনার ভ্রমন হোক নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।
*আমাদের ভ্রমনের সময়ের আলোকে লেখা। অতএব সময়ের সাথে সব ধরনের ভাড়া, গাড়ির সময় ইত্যাদি পরিবর্তন হতে পারে।
*লেখকের পূর্বানুমতি ছাড়া পুরো বা কোন অংশ এডিট কিংবা কপি করা অনুচিত।
*কোন মতামত বা সংশোধনী কিংবা জিঙ্গাসা থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
*তথ্যগত সহায়তা ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া এবং জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।
©কপিরাইট: আলমগীর হোসেন
TM:August 2018
TD:25-27 (2 nights 3 days)