অন্যান্য জেলার মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার শরীয়তপুর জেলা। আজ আলোচনা করবো শরীয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থান নিয়ে। জানাব কি দেখবেন শরীয়তপুরে, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ইত্যাদি। তবে তার আগে চলুন জেলা শরীয়তপুর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক তথ্য জেনে নেয়া যাক।

শরীয়তপুর জেলা:
শরীয়তপুর জেলা পূর্বে বৃহত্তর বিক্রমপুরের অংশ ছিল। ১৮৬৯ সালে প্রশাসনের সুবিধার্থে এটাকে বাকেরগঞ্জ জেলার অংশ করা হয়। কিন্তু এ অঞ্চলের জনগণের আন্দোলনের মুখে ১৮৭৩ সালে এ অঞ্চলকে মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্গত করে ফরিদপুর জেলার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সবশেষ প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের সময় ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ শরীয়তপুরকে জেলার মর্যাদা প্রদান করা হয়। শরীয়তপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। বর্তমানে ছয়টি উপজেলার সমন্বয়ে শরিয়তপুর জেলার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আয়তন:
শরীয়তপুর জেলার আয়তন ১১৮১.৫৩ বর্গকিলোমিটার।
অবস্থান:
এই জেলার উত্তরে মুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা, পুর্বে চাঁদপুর জেলা এবং পশ্চিমে মাদারিপুর জেলা। শরীয়তপুর মূলত চর এলাকা।
উপজেলা সমূহ:
১.জাজিরা
২.শরীয়তপুর সদর
৩.গোসাইরহাট
৪.ডামুড্যা
৫.ভেদরগঞ্জ
৬.নড়িয়া
উল্লেখযোগ্য নদ-নদী:
শরীয়তপুর জেলা কীর্তিনাশা নদীর তীরে অবস্থিত।
অন্যান্য নদী গুলো;
১.পদ্মা
২.মেঘনা
৩.দামুদিয়া
৪.আরিয়াল খাঁ
আবার এসব নদীর অসংখ্য শাখা নদীও রয়েছে।

দর্শনীয় স্থান:
১.সুরেশ্বর দরবার শরীফ
২.মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম
৩.বুড়ির হাট মসজিদ ও
বুড়ির হাট মুন্সী বাড়ী
৪.রুদ্রকর মঠ
৫. মহিষারের দীঘি
৬.হাটুরিয়া জমিদার বাড়ি
৭.রাম সাধুর আশ্রম
৮.মানসিংহের বাড়ী।

কিভাবে আসবেন?
ঢাকা থেকে শরীয়তপুরে আসতে আপাতত সড়ক ও নৌপথই একমাত্র ভরসা। তবে পদ্মা সেতুর কাজ হয়ে গেলে এবং সেতুতে রেললাইন যুক্ত হলে ট্রেনেও আসতে পারবেন শরীয়তপুর। ঢাকা থেকে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরীঘাট হয়ে বাসে করে শরিয়তপুর আসতে পারবেন, সময় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে। আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গেও শরীয়তপুর আসতে পারবেন। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া (শিমুলিয়া ঘাট) পর্যন্ত বাসে এসে সেখান থেকে ফেরী/লঞ্চ/স্পীডবোটে করে প্রমত্তা পদ্মা নদী পার হয়ে মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরীঘাট আসবেন। সেখান থেকে শরীয়তপুরগামী বাসে চড়তে পারবেন, আমরা এ রুটটাই ব্যবহার করেছিলাম। মিরপুর ১২ থেকে স্বাধীন, গাবতলী থেকে বসুমতী, আব্দুল্লাহপুর থেকে প্রচেষ্টা সহ বেশ কিছু বাস মাওয়া ঘাটে আসে, ভাড়া নেবে ৯০-১২০ টাকা। মাওয়া ঘাট পর্যন্ত সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো।

থাকার ব্যবস্থা:
শরীয়তপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল পাবেন, কম বাজেটের হোটেলও পাবেন। খরচ পড়বে ২০০-১০০০ টাকার মতো। উপজেলা সদরগুলোতে থাকার ব্যবস্থা আছে কিনা জানা নেই। তাছাড়া রয়েছে জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, এসব জায়গায় থাকতে আপনার আগাম অনুমতি সাথে আনতে হবে।
খাবার ব্যবস্থা:
খাবার বিষয়ক কোন ঝামেলা নেই। জেলার সবখানেই সাধ্যের মধ্যে সকাল,দুপুর,রাতের জন্য ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পাবেন।

চলুন এবার ঘুরে বেড়াই!
সে অর্থে তেমন জনপ্রিয় কোন ভ্রমণ এলাকা শরীয়তপুরে নেই, তবে যথেষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জেলা এটা। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে, সেতু হয়ে গেলে এলাকার পর্যটন নতুন মাত্রা পাবে এমন আশা করাই যায়। ঘোরা শুরু করুন তবে…..
সুরেশ্বর দরবার শরীফ:
নড়িয়া উপজেলায় অবস্থিত।
মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম:
নড়িয়ার কেদারপুর ইউনিয়নের কলুকাঠি গ্রামে এটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মাছের এ্যাকুরিয়াম। তাছাড়া এখানে চিড়িয়াখানা সহ শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। শরীয়তপুর জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটা সকলের কাছে পরিচিত।
বুড়ির হাট মসজিদ ও বুড়ির হাট মুন্সী বাড়ী:
দুটোরই অবস্থান ডামুড্যা উপজেলায়।
রুদ্রকর মঠ:
অবস্থান শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে।
মহিষারের দীঘি :
দক্ষিণ বিক্রমপুর।
হাটুরিয়া জমিদার বাড়ি:
গোসাইরহাট উপজেলায় জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।
রাম সাধুর আশ্রম:
নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নে এর অবস্থান।
মানসিংহের বাড়ী:
নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুরে অবস্থিত।

এবার ফেরার পালা:
ঢাকায় ফিরতে শরীয়তপুর জেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডে চলে আসুন, অথবা উপজেলা সদর থেকে বাস চলে কিনা তা স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনে নিন। টিকেট করে বাসে উঠে পড়ুন, রাতের সর্বশেষ বাস কখন ছাড়ে আগেই জেনে নিন। চাইলে শরীয়তপুর থেকে গাড়ী বদল করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে পারেন। কাঁঠালবাড়ী-মাওয়া ঘাটে সারারাত ফেরি সার্ভিস চালু থাকে (যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে)। তবে লঞ্চ এবং স্পিডবোট সার্ভিস সন্ধ্যা ৭-৮ পর্যন্ত চালু থাকে সম্ভবত।
মনে রাখবেনঃ
প্রত্যেকটা পর্যটন এলাকা আমাদের জাতীয় সম্পদ। অতএব এর ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। পরিবেশ পরিস্কার রাখুন। বেড়াতে গিয়ে সব কিছু চাহিদামতো রাজকীয় পাবেন এ চিন্তা এড়িয়ে চলুন! প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষের সহযোগীতা নিন,স্থানীয় মানুষদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। বিপদে পড়লে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগীতা নিন। ভ্রমন করুন, দেশকে জানুন।
আপনার ভ্রমন হোক নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।
*আমাদের ভ্রমনের সময়ের আলোকে লেখা। অতএব সময়ের সাথে সব ধরনের ভাড়া, গাড়ির সময় ইত্যাদি পরিবর্তন হতে পারে।
*নদী এলাকা পার হতে হয়, তাই হঠাৎ প্রতিকূল আবহাওয়া হলে সমস্যায় পড়তে পারেন এজন্য আবহাওয়া বার্তা জেনে নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজান।
*একটা কথা বারবারই বলি, তা হলো যেখানেই ভ্রমনে যান না কেন ভাড়া, খাবার এ সব বিষয়ে দরদাম করে নিবেন। নইলে ঠকার সম্ভাবনা শতভাগ!
*নিজের সুবিধা মতো ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজান এবং সেভাবেই চলুন।
*লেখকের পূর্বানুমতি ছাড়া পুরো বা কোন অংশ এডিট কিংবা কপি করা অনুচিত।
*কোন মতামত বা সংশোধনী কিংবা জিঙ্গাসা থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
*তথ্যগত সহায়তা ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া এবং জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।
©কপিরাইট: আলমগীর হোসেন
TM:March 2019
TD:06 (0 night 1 day)
১৪.০৩.২০১৯
ধুনট, বগুড়া