অনুষ্ঠিত হলো অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (অ্যাপটেক) এর কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন । শুক্রবার (০৭ এপ্রিল) রাজধানী উত্তরার পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারে এ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। অ্যাপটেকের ২২টি পদের প্রতিটিতে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম থেকে এগারতম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। প্রতিটি ভোটারকে তাদের যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ভোট দিতে দেখা গেছে।
২০২৩-২০২৪ মেয়াদের নতুন কমিটির সভাপতি সাজ্জাক হোসেন শিহাব ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ
অ্যালামনাইয়ের ভোটারগণ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এ সংগঠন আমাদের প্রাণের সংগঠন। আশা করি নির্বাচিত কমিটি এ সংগঠনকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। নির্বাচনে সাজ্জাক হোসেন শিহাব সভাপতি ও তৌফিক আহমেদ সম্পাদক নির্বাচিত হন। উক্ত কমিটি ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে ২ বছর দায়িত্ব পালন করবেন।
অ্যাপটেকের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, খুবই সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন প্রার্থীকে আচরণবিধি লংঘন করতে দেখা যায়নি। প্রত্যেক প্রার্থী এই নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন। প্রত্যেক ভোটার সুশৃঙ্খলভাবে তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এমন সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য তিনি প্রার্থী, ভোটার, শিক্ষক, অতিথি, গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
নব-গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যদের শপথ পাঠ করাচ্ছেন নব-নির্বাচিত সভাপতি সাজ্জাক হোসেন শিহাব
নব-নির্বাচিত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সাজ্জাক হোসেন শিহাব উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে প্রতিক্রিয়া করতে গিয়ে বলেন, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-গৌরব ও ঐতিহ্যের শত বছর পেরুনো এক বিদ্যাপীঠের নাম। পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এদেশের বস্ত্র-প্রকৌশল শিক্ষার বাতিঘর। আমি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনের অংশ হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের ওপর আপনাদের অনেক প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। আমরা বেশি কথা বলতে চাই না, শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা ভালো কিছু করতে চাই। আমরা সেই গল্প কাজের মাধ্যমে দ্রুতই আপনাদেরকে বলব। আমাদের পাশে থাকুন। এছাড়া নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার শেষে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ দেখার মিশনে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, আরো বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ২০১৯ সালে জুনের ১৭ বা ১৮ তারিখ, ২জন বসে ভাবছি অল্প টাকায় একটা বড় ট্যুর দেয়া যায় কি না! মাথায় এলো উত্তরাঞ্চলের কথা। ২ ছোট ভাই আছে যার একজন বেরোবিতে আর একজন হাজী দানেশে পড়ে। ১৯ তারিখ সকালে তাদের ফোন দিয়েই বেরিয়ে পড়লাম। রংপুর দিয়ে ট্যুর শুরু আর নীলফামারী দিয়ে শেষ করার পরিকল্পনা করলাম।
ঢাকা থেকে যেভাবে আসবেন:
আমরা বগুড়া থেকে গিয়েছিলাম। ৫ জনের একটা ছোট গ্রুপ ছিল আমাদের। তবে আপনি ঢাকা থেকে আসতে চাইলে সহজেই আসতে পারবেন। ঢাকা থেকে রংপুরের দুরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। শ্যামলী, ডিপজল, হানিফ সহ অনেক পরিবহন কোম্পানির বাস এ রুটে চলাচল করে। আসতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা। ট্রেনেও আসতে পারবেন, তবে বাসের চেয়ে সময় একটু বেশী লাগবে। চাইলে বিমানেও আসতে পারবেন, নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামতে হবে।
ভ্রমণ যাত্রা: বগুড়া ৪ মাথা আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা থেকে আসা ডিপজল পরিবহনের গাড়ীতে উঠলাম সন্ধ্যা ৬টায়। ভাড়া নিল ১০০ টাকা। নামলাম রংপুরের মডার্ন মোড়ে। ছোট ভাই ফিরোজ এসে আমাদের তার মেসে নিয়ে গেল, বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার শেষে হাটলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বেশ রাতে রুমে ফিরে ঘুম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রওনা দিলাম তাজহাট জমিদার বাড়ির দিকে। অটোরিক্সা রিজার্ভ নিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে। আসা যাওয়া ভাড়া পড়েছিল জনপ্রতি ২০ টাকা। এই তাজহাট জমিদারবাড়ি একসময় হাইকোর্টের উত্তরাঞ্চল বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
বর্তমানে এটা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্পদ এবং এখানে রংপুর যাদুঘর অবস্থিত। জমিদার বাড়িটিকে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছে শোভিত করা হয়েছে।
সেখান থেকে রংপুর শহরের বাইরের একটি পিকনিক স্পট দেখতে গেলাম। ভিন্নজগৎ বিনোদন পার্ক। রংপুরের পাগলাপীর হয়ে যেতে হয়, নিতে হবে অটোরিক্সা রিজার্ভ। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ থেকে এখানে প্রতিবছর শিক্ষাসফরে আসে শিক্ষার্থীরা। এখানকার বিশেষ আকর্ষন কৃত্রিম সৌরজগত, আছে সুইমিং পুল সহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ সুবিধা। বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরী করা এ বিনোদন কেন্দ্রটিতে একসাথে ৫০০ টি পর্যন্ত গ্রুপের পিকনিক আয়োজন করা সম্ভব। সেখান থেকে শহরে এসে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে ফিরলাম মেসে। আসার সময় ফিরোজ যে জিলাপিটা খাওয়ায় ছিলো তা ভোলার নয়!
বিকেলেই রওনা দিলাম দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। রংপুর থেকে দিনাজপুর বাস ভাড়া ১০০ টাকা। রাত আটটা নাগাদ হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছালাম। রাতের খাবার শেষে মাঝরাত পর্যন্ত শিহাবের তাজউদ্দিন আহমদ হলের ছাদে আড্ডা দিতে দিতে পরের দিনের ট্যুর প্লান করে ফেললাম। সকালেই রওনা হলাম পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে। দিনাজপুর-পঞ্চগড় পর্যন্ত বাস ভাড়াটা মনে নেই। পঞ্চগড় শহরে নেমেই আরেকটি বাস ধরে তেঁতুলিয়া পৌছালাম।
সেখান থেকে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। চলার পথে দেখলাম সমতলের চা চাষ, রাস্তার দুইপাশে সারিসারি অনেক চা বাগান। বিজিবি কর্মকর্তা আসায় সীমান্তের দিকে যেতে একটু দেরি করতে বললো ডিউটিরত এক বিজিবি জওয়ান। এই সুযোগে দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিলাম।
বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট আসলে কোন পর্যটন এলাকা নয়। এটা দেশের সর্ব উত্তরের ভূখন্ড। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হয় এবং প্লাস্টিক ও ঔষধ সামগ্রী রপ্তানি করা হয়।
এ বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় পাথর, প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাকে করে পাথর আসে ভারত থেকে। পাথরকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মযজ্ঞ চোখে পড়বে আপনার, অনেক শ্রমিক কাজ করছে এখানে। এখানে ইমিগ্রেশন পয়েন্টও রয়েছে।
পঞ্চগড় শহরে এসে একটু ঘুরেফিরে ছুটলাম ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে, উদ্দেশ্য দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় আম গাছ দর্শন। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে লোকাল বাস ধরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদরে যখন পৌছালাম তখন সূর্য ডুবতে আর আধ-ঘন্টার মতো বাকি আছে। নেমেই তাড়াহুড়ো করে অটোরিক্সা রিজার্ভ করে রওনা দিলাম হরিণমারী গ্রামের দিকে। সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম হরিণমারী, এখানেই দেশের সবচেয়ে প্রাচীন আমগাছটি দণ্ডায়মান।
যতক্ষণে ২০ টাকার টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকলাম ততক্ষণে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে। আলো-ছায়াতে দেখলাম আমগাছ সহ চারপাশ। ছবি উঠলাম কিন্তু অস্পষ্ট! বলা হয় আমগাছটি ২০০ বছরের পুরাতন এবং তিন বিঘা জমি জুড়ে এর ব্যাপ্তি। আমাদের আন্দাজে ২৫-৩০ শতাংশ জমির উপর এর ব্যাপ্তি। যাহোক গাছটি অনেক বড়, এর ডালগুলো অনেক মোটা হয়ে মাটি বেয়ে আবার নতুন একটি গাছের মতো উপরে উঠে গেছে।
সেখান থেকে ফিরলাম বালিয়াডাঙ্গী সদরে, সন্ধ্যার নাস্তা সেরে ঢাকাগামী বাসে করে এসে নামলাম দিনাজপুরের দশমাইল নামক স্থানে, তারপর হাবিপ্রবিতে।
রাতে ক্যাম্পাসে আড্ডা, ঘোরাঘুরি করে ঘুম। পরদিন খুব ভোরে উঠে রওনা হলাম দশমাইলের দিকে। উদ্দেশ্য কান্তজিও মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ দেখা। দশমাইল থেকে অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে গেলাম কান্তজিও মন্দিরে। দশমাইল থেকে ১৫-২০ মিনিটের পথ। এই মন্দিরটি দেশের অন্যতম পুরাতন মন্দির।
১৭৫২ সালে মহারাজা প্রাণনাথ ও তার পোষ্যপুত্র রামনাথ কর্তৃক মন্দিরটি নির্মিত হয়। দুইবার বড় ভূমিকম্পে হ্রাস পেয়েছে মন্দিরটির উচ্চতা। মধ্যপ্রাচ্যের স্থাপত্যবিদরা এর নকশা প্রস্তুতকারী ও নির্মাতা। প্রতিবছর এখানে মেলা বসে, সে সময় দেশী বিদেশী পূর্ণার্থীর ঢল নামে কান্তজিও মন্দিরে। কান্তজিও মন্দির থেকে ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদটি অটোরিক্সা যোগে দশ মিনিটের দূরত্বে এবং দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ধারনা করা হয় কান্তজিও মন্দির নির্মান করতে আসা মুসলিম স্থাপত্যশিল্পীরা নিজেরা নামাজ পড়ার জন্য মসজিদটি নির্মান করেন, তবে এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
মসজিদের গায়ে স্থাপিত শিলালিপি থেকে জানা যায় মসজিদটি ১৭৯৩ সালে নির্মিত। নয়াবাদ মসজিদ ও কান্তজিও মন্দির দুটিই বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। ঐতিহাসিক স্থাপনা দুটি দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত। সেখান থেকে রিজার্ভ অটোতেই ফিরলাম দশমাইল। দিনাজপুরের জনপ্রিয় পিকনিক স্পট স্বপ্নপূরী। তবে এখানে দুইবার গিয়েছিলাম তাই আবার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না! দশমাইল থেকে রংপুরের বাস ধরে সৈয়দপুর উপজেলা শহরে নামলাম। এখানে দর্শন করলাম সৈয়দপুর রেলওয়ে জংশন ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর। তবে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চিনি মসজিদ দেখা।
ঐতিহাসিক চিনি মসজিদটি রেলওয়ে স্টেশনের নিকটেই। দেয়ালের গায়ে চীনা মাটির প্লেটের ভগ্নাংশ ব্যবহৃত হয়েছে বলে মসজিদটি চিনি মসজিদ নামে পরিচিত পেয়েছে।
সৈয়দপুরে বিরাট সংখ্যার বিহারী ও অবাঙালীদের বসবাস রয়েছে। সৈয়দপুর অনেক বড় একটা শহর। আমার দেখা সবচেয়ে বড় উপজেলা শহর, কোন কোন জেলা শহরকেও ছাড়িয়ে যাবে এ শহর। সময় স্বল্পতার কারনে তিস্তা ব্যারেজ দেখা সম্ভব হয়নি। তখন বিকেল, রওনা হলাম রংপুরের দিকে। রংপুর থেকে বগুড়া পৌছালাম রাত ১১টার দিকে। ছোট বাজেটের দীর্ঘ জার্নির এক বড় ট্যুরের সমাপ্তি ঘটলো। আরো একবার যাব উত্তরাঞ্চল, দেখবো গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের রুপ।
থাকা-খাওয়া: যেসব জেলার বর্ণনা দিলাম এর কোন জেলাতেই আপনাকে রাতে থাকতে বা খেতে অসুবিধায় পড়তে হবে না। ৫০০-৫,০০০ টাকার মধ্যে মাঝারী থেকে উন্নতমানের অসংখ্য হোটেল পাবেন রাত্রিযাপনের জন্য। রংপুর বিভাগের একমাত্র ফাইভ স্টার হোটেল রংপুরে অবস্থিত। আঞ্চলিক খাবারগুলো খেতে ভুলবেন না! খাবারের দাম কমই।
সৈয়দপুর-ঢাকা: পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের বাসগুলো সৈয়দপুর হয়েই ঢাকা যায়। ঢাকায় ফিরতে বাস সংক্রান্ত কোন সমস্যা আপনাকে পড়তে হবে না। চাইলে ট্রেনেও ঢাকায় ফিরতে পারবেন। রয়েছে বিমান সুবিধা।
কিছু জরুরী কথা:
১. ছুঁটির দিন ও মৌসুম এড়িয়ে আসলে খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
২. স্থানীয়দের সাথে ভালো আচরণ করুন। তারা অনেক ভালো মনের মানুষ ও সাহায্যকারী।
৩. কোন সমস্যায় পড়লে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের সহযোগীতা নিন। তারা সদা প্রস্তুত সহযোগীতা করতে।
৪. অনুনোমদিত কোন জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৫. পরিবেশ পরিস্কার রাখুন, মনে রাখবেন একজন প্রকৃত পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমী কখনো পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে না।
৬. স্যালাইন, প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, স্যাভলন সাথে রাখবেন।
৭. সীমান্তবর্তী এলাকায় আিন মেনে চলুন, বেআইনী কাজ করে বিপদ ডেকে আনবেন না।
ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। নিজে ভালো থাকুন, প্রাণের দেশটাকে ভালো রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
পাহাড়ের মায়াবি সৌন্দর্য নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নাই! বাংলাদেশ দেখার মিশনে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, এবার স্থির করলাম পাহাড়ে যাব। শুধু পাহাড় দেখবো আর ঘুরে বেড়াবো! গ্রুপের একজন বললো তাহলে কেওক্রাডং যাওয়া যাক, জায়গাটা আমার মাথাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ, কিন্তু কাউকে বলছিলাম না দুর্গম আর ব্যয়বহুল ট্যুর হবে মনে করে! লুফে নিলাম প্রস্তাব। এখানে কেওক্রাডং অভিযানের কথা উল্লেখ করলাম কারন আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বগালেক ও কেওক্রাডং পর্বত অভিযান। আমি এ পর্বে রাঙ্গামাটি শহর ও এর আশেপাশের সুন্দর স্পটগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা বান্দরবান ঘুরে এসে রাঙ্গামাটি শহর ও এর আশেপাশের দর্শণীয় স্পটগুলো দেখে ঢাকায় ফিরেছি। বান্দরবান ও কেওক্রাডং নিয়ে আমার আরো লেখা আছে। যাহোক প্রতিবারের মতো অনেকের ট্যুরমেট হওয়ার কথা থাকলেও এবারও বেশীরভাগই কেটে পড়েছে! শেষমেশ ৬ জনের টিকিট কাটতে পারলাম। ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ৫ মার্চ ২০২০ রাতে। চলুন বিস্তারিত গল্প শুরু করি!
কি কি দেখেছি:
১. রাঙ্গামাটি শহর।
২. কাপ্তাই লেক।
৩. শুভলং ঝর্ণা।
৪. পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট।
৫. ইয়াং সারেং রেস্টুরেন্ট।
৬. বৌদ্ধ মন্দির।
৭. আদিবাসী গ্রাম ও মার্কেট।
৮. ঝুলন্ত সেতু।
ঢাকা-রাঙ্গামাটি: আগেই বলেছি আমরা বান্দরবান হয়ে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলাম। তারপরও আপনার সুবিধার্থে ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়া উপায় বলে দিচ্ছি। ভ্রমণ মৌসুম ও সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবস হলে সরাসরি রাঙ্গামাটির টিকেট নাও পেতে পারেন। ঢাকা-রাঙ্গামাটি বাস ভাড়া নন-এসি ৬৫০ টাকা। চট্টগ্রাম হয়েও রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নন-এসি বাস ভাড়া ৪২০ টাকা। ইউনিক পরিবহন, হানিফ, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ অনেক কোম্পানির বাস এ রুটে চলাচল করে। সরাসরি রাঙ্গামাটির টিকেট না পেলে আপনাকে চট্টগ্রাম হয়েই যেতে হবে। ভাড়া লাগবে ১৩০ টাকা, সময় লাগবে ২.৫-৩ ঘন্টার মতো।
বান্দরবান-রাঙ্গামাটি:
বান্দরবান থেকে প্রতিদিন ৩-৪ টা ট্রিপ রাঙ্গামাটি যায়। প্রথম বাস যায় সকাল সাড়ে ৭টায় আর শেষ বাস বেলা ১১টায়, পারলে অগ্রীম টিকেট কেটে রাখবেন। টিকিটের মূল্য ১২০-১৫০ টাকা (সঠিকটা মনে পড়ছে না)। বেলা ১১টার পর এ রুটে আর কোন বাস পাবেন না। এরপর যেতে চাইলে আপনাকে চাঁন্দের গাড়ী রিজার্ভ নিতে হবে, ভাড়া অনেক বেশী।
রাঙ্গামাটি শহরের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:
একমাত্র রাজবন বিহার ছাড়া শহরের আশেপাশের সকল স্পটে ঘুরতে রিজার্ভ ইঞ্জিন চালিত নৌকাই একমাত্র ভরসা। কারন আপনাকে ঘুরে বেড়াতে হবে কাপ্তাই হ্রদের বুকে নৌকায় দাপিয়ে। নৌকা ভাড়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক বেঁধে দেয়া হলেও অনেক সময় বোট মালিকরা পর্যটকদের ঠকিয়ে থাকে, তাই সাবধান হোন। ছোট, মাঝারি, বড় এই ৩ সাইজের নৌকা পাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে ১,৮০০-৩,০০০ টাকা। গ্রুপের সদস্য সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নৌকা ভাড়া করুন। আমরা সংখ্যায় কম হলেও একটা বড় ছাদযুক্ত নৌকা সাশ্রয়ী মূল্যেই পেয়েছিলাম। স্পিডবোট ও ভাড়া পাবেন।
স্পটগুলো সম্পর্কে সামান্য ধারণা:
রাঙ্গামাটি শহর: বান্দরবান শহরের চাইতে রাঙ্গামাটি শহরটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। কাপ্তাই লেকের ধারে শহরটার অবস্থান।
কাপ্তাই লেক: কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিত। উপরের স্পটগুলো দেখে শেষ করতে ৬-৭ ঘন্টা সময় লাগে, আর এই পুরোটা সময় আপনাকে নৌকায় করে কাপ্তাইয়ের বুকে ঘুরতে হবে। সাঁতার জানলে হ্রদে গোসল করতে ভুলবেন না, সাঁতার না জানলে নামার দরকার নাই। এমনও শুনেছি, অনেকে নাকি শুধু কাপ্তাই হ্রদে গোসল করার জন্যই রাঙ্গামাটি যায়!
শুভলং ঝর্ণা: দুইপাশে উঁচু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে নৌকা চলছে। একসময় নৌকার মাঝি আপনাকে শুভলং ঝর্ণার কাছে নিয়ে যাবে। শুষ্ক মৌসুমে এই ঝর্ণাতে পানি থাকে না। বর্ষায় আসতে হবে এর আসল রুপ দেখতে চাইলে। দেশের অন্যতম বড় ঝর্ণাটির নিকটে পৌছাতে ৩০ টাকা মূল্যের টিকেট কাটতে হবে।
পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট: এই রেস্টুরেন্টটি কাপ্তাই লেকের মাঝখানে এক টিলার উপর অবস্থিত। খাবারের জন্য এর সুনাম যত না ছড়িয়েছে তার চেয়ে বেশী ছড়িয়েছে ব্যতিক্রম নামের জন্য!
ইয়াং সারেং রেস্টুরেন্ট: এই রেস্টুরেন্টটাও কাপ্তাই লেকের মাঝে একটি উঁচু টিলার উপর প্রতিষ্ঠিত। নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানোর এক উপযুক্ত জায়গা এটা।
বৌদ্ধ মন্দির: কাপ্তাইয়ের বুকে বিশাল উঁচু পাহাড়ের চূঁড়ায় এই মন্দিরটির অবস্থান। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন এর সংস্কার কাজ চলছিল তাই যাওয়া হয়নি। তবে আরেকটি মন্দির আছে একটু পরেই। অনেক উঁচু একটি মুর্তি রয়েছে এখানে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে একটি আদিবাসী মার্কেট গড়ে উঠেছে।
আদিবাসী গ্রাম: লেকের মাঝখানের পাহাড়গুলোতে আদিবাসীদের বসবাস। এমন একটি পাহাড়ে বড় একটি গ্রাম রয়েছে। এখানে আসলে আদিবাসীদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পারবেন। আদিবাসীদের হাতে তৈরী পোষাক ও বিভিন্ন সামগ্রী দেখার এবং কেনার সুব্যবস্থা রয়েছে।
ঝুলন্ত সেতু: রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতুর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ঝুলন্ত সেতুটি রাঙ্গামাটি জেলার ব্রান্ড। সেতুটিতে উঠতে ২০ টাকা ফি দিতে হয়। লোহার রেলিং ও কাঁঠের পাটাতন ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ভারসাম্য রাখার জন্য ব্যবহার হয়েছে মোটা ক্যাবল।
থাকা-খাওয়া :
রাঙ্গামাটিতে থাকা ও খাওয়ার কোন সমস্যা নেই। থাকার জন্য পাবেন ৫০০-৩,০০০ টাকা মূল্যের রুম। মাঝারী থেকে ভালো মানের অসংখ্য খাবার হোটেল পাবেন। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর স্থানীয় খাবার খেতে ভুলবেন না। রাঙ্গামাটির পাহাড়ী কলা, আনারস ও পেঁপের সুনাম সর্বত্র। কাপ্তাই লেক থেকে মারা মাছের শুটকি সাথে করে আনতে পারেন।
এবার ফিরতে হবে:
ঢাকায় ফিরতে অগ্রীম টিকেট কেটে রাখুন। তাছাড়া ঝামেলায় পড়তে পারেন। টিকিটের মূল্য নন-এসি ৬৫০ টাকা, এসি ৯০০ টাকা। তবে বিআরটিসির এসি বাস ভাড়া ৭০০ টাকা। হোটেল, রিসোর্ট, নৌকা রিজার্ভ কিংবা গাইডের যোগাযোগ নাম্বার লাগলে জানাতে পারেন, সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ্।
কিছু জরুরী কথা:
১. ছুঁটির দিন ও মৌসুম এড়িয়ে আসলে খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
২. পাহাড়ে বেশীরভাগই আদিবাসীদের বসবাস। তাদের জীবনাচরণ ও সংস্কৃতিকে কোন ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। তাদের সাথে ভালো আচরণ করুন। তারা অনেক ভালো মনের মানুষ ও সাহায্যকারী।
৩. কোন সমস্যায় পড়লে ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা প্রশাসনের সহযোগীতা নিন। তারা সদা প্রস্তুত সহযোগীতা করতে।
৪.দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় টেলিটক ও রবি সিম কার্ড ছাড়া অন্য কোম্পানির নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যায় না।
৫. পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে আনুন।
৬. অনুনোমদিত কোন জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৭. পরিবেশ পরিস্কার রাখুন, মনে রাখবেন একজন প্রকৃত পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমী কখনো পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে না।
৮. স্যালাইন, প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, স্যাভলন ও মশার অত্যাচার থেকে বাঁচার ক্রিম সাথে করে নিয়ে আসবেন।
ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। নিজে ভালো থাকুন, প্রাণের দেশটাকে ভালো রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নাই! বাংলাদেশ দেখার মিশনে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, এবার স্থির করলাম পাহাড়ে যাব। শুধু পাহাড় দেখবো আর ঘুরে বেড়াবো! গ্রুপের একজন বললো তাহলে কেওক্রাডং যাওয়া যাক, জায়গাটা আমার মাথাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ, কিন্তু কাউকে বলছিলাম না দুর্গম আর ব্যয়বহুল ট্যুর হবে মনে করে! লুফে নিলাম প্রস্তাব। এখানে কেওক্রাডং অভিযানের কথা উল্লেখ করলাম কারন আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বগালেক ও কেওক্রাডং পর্বত অভিযান। আমি এ পর্বে বান্দরবান শহর ও এর আশেপাশের স্পটগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। বগালেক ও কেওক্রাডং নিয়ে আমার আরেকটি লেখা আছে। যাহোক প্রতিবারের মতো অনেকের ট্যুরমেট হওয়ার কথা থাকলেও এবারও বেশীরভাগই কেটে পড়েছে! শেষমেশ ৬ জনের টিকিট কাটতে পারলাম। ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ৫ মার্চ ২০২০ রাতে। চলুন বিস্তারিত গল্প শুরু করি!
কি কি দেখেছি:
১. বান্দরবান শহর।
২. স্বর্ণ মন্দির।
৩. শৈলপ্রপাত।
৪. নীলাচল পিকনিক স্পট।
৫. মেঘলা অবকাশ কেন্দ্র।
ঢাকা-বান্দরবান: ভ্রমণ মৌসুম ও সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবস হওয়ায় আমরা সরাসরি বান্দরবানের টিকেট পাইনি। ঢাকা-বান্দরবান বাস ভাড়া নন-এসি ৬৫০ টাকা।কয়েকটি স্ট্যান্ড ঘুরে অবশেষে সায়দাবাদ থেকে চট্টগ্রামে রাতের বাস টিকেট কাটলাম। চট্টগ্রাম পৌঁছেছিলাম খুব ভোরে। নন-এসি ৪২০ টাকা ভাড়া নিয়েছিল ইউনিক পরিবহন। হানিফ, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ কয়েকটি কোম্পানির বাস এ রুটে চলাচল করে। সরাসরি বান্দরবানের টিকেট না পেলে আপনাকে চট্টগ্রাম হয়েই যেতে হবে। সকালের নাস্তা সেরে বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল থেকে বান্দরবানগামী সকাল সাড়ে ৭টার বাস ধরেছিলাম। পূর্বাণী ও পূরবী নামের ২টি কোম্পানির বাস ৩০মিনিট পরপর চট্টগ্রাম-বান্দরবান রুটে চলাচল করে। ভাড়া ১৩০ টাকা, সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো।
বান্দরবানের স্পটগুলো ভ্রমণ:
বান্দরবানে সাধারনত যারা ১ বা ২ দিনের ট্যুরে যায় তারা এই স্পটগুলো ঘুরে বেড়ায়, আর এ রকম ট্যুরিস্টের সংখ্যাই বেশী। স্পটগুলো ঘুরতে ৫-৭ ঘন্টা সময় লাগে। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু করুন। বান্দরবান নেমে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা শেষ করুন। এখন অটো বা চাঁন্দের গাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে ভাড়া করুন গাড়ী। গ্রুপে সদস্য সংখ্যা বেশী হলে খরচ কম পড়বে। উপরে উল্লেখ করা স্পটগুলো দেখতে চাঁন্দের গাড়ী ভাড়া নেবে ২,০০০-২,৫০০ টাকা। অটো ৫০০-৬০০ টাকা। কঠিন দরদাম করে নিবেন, নইলে ঠকার সম্ভাবনা শত ভাগ! দূরের স্পটগুলো দেখতে চাইলে ভাড়া বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
স্পটগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কথা:
বান্দরবান শহর: শহরটা ছিমছাম মনে হয়নি আমার কাছে। তবে শহরটাতে অদ্ভূত এক মায়া আছে, বারবার যাওয়ার টান অনুভব করবেন! দূরের পাহাড় থেকে দেখলে দারুণ লাগে শহরটাকে।
স্বর্ণ মন্দির: শহরের পাশেই এর অবস্থান। উঁচু একটি পাহাড়ের চূড়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরটির অবস্থান। মন্দিরটির কোথাও স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়নি, তবে সোনালী রঙ ব্যবহার করা হয়েছে বলে এটা স্বর্ণ মন্দির নামে পরিচিত পেয়েছে। মন্দিরটিতে প্রবেশ ফি ৫০ টাকা।
শৈলপ্রপাত: শহর থেকে একটু দূরে বান্দরবান-রুমা সড়কের পাশে এর অবস্থান। আমরা শুষ্ক মৌসুমে গিয়েছিলাম বিধায় এর আসল সৌন্দর্য দেখতে পাইনি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে এই জলপ্রপাতটির যৌবন দেখতে পাবেন।
নীলাচল পিকনিক স্পট: শহরের পাশেই উঁচু পাহাড়ের চূঁড়াতে এই পিকনিক স্পট বানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন এর নিয়ন্ত্রন করে। দর্শনার্থী প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। এখান থেকে বান্দরবান শহর পুরোটা ও স্বর্ণ মন্দির খুব ভালোভাবে দেখা যায়।
মেঘলা অবকাশ কেন্দ্র: শহরের প্রবেশ মুখেই এই স্পটটি অবস্থিত। জেলা প্রশাসন এই স্পটের নিয়ন্ত্রক। এখানে ঝুলন্ত সেতু, লেক, ক্যাবল কার, মিনি চিড়িয়াখানা, প্যাডেল বোটের ব্যবস্থা আছে। অবকাশ কেন্দ্রের প্রবেশ ফি ৫০ টাকা।
থাকা-খাওয়া :
বান্দরবানে থাকা ও খাওয়ার কোন সমস্যা নেই। থাকার জন্য পাবেন ৫০০-৩,০০০ টাকা মূল্যের রুম। আমাদের ডাবল বেডের রুমভাড়া লেগেছিল ১,৬০০ টাকা। মাঝারী থেকে ভালো মানের অসংখ্য খাবার হোটেল পাবেন। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর স্থানীয় খাবার খেতে ভুলবেন না। বান্দরবানের পাহাড়ী কলা, আনারস ও পেঁপের সুনাম সর্বত্র।
এবার ফেরার পালা:
আগেই বলেছি আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বগালেক ও কেওক্রাডং ট্যুর। ফেরার পথে আমরা এসব দেখেছি। আমরা বান্দরবান থেকে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলাম, সেখান থেকেই ঢাকায় ফিরেছি। আপনি বান্দরবান থেকেই ঢাকায় ফিরতে চাইলে অগ্রীম টিকেট কেটে রাখুন। তাছাড়া ঝামেলায় পড়তে পারেন। হোটেল, রিসোর্ট কিংবা গাইডের যোগাযোগ নাম্বার লাগলে জানাতে পারেন, সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ্।
কিছু জরুরী কথা:
১. ছুঁটির দিন ও মৌসুম এড়িয়ে আসলে খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
২. পাহাড়ে বেশীরভাগই আদিবাসীদের বসবাস। তাদের জীবনাচরণ ও সংস্কৃতিকে কোন ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। তাদের সাথে ভালো আচরণ করুন। তারা অনেক ভালো মনের মানুষ ও সাহায্যকারী।
৩. কোন সমস্যায় পড়লে ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর সহযোগীতা নিন। তারা সদা প্রস্তুত সহযোগীতা করতে।
৪.দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় টেলিটক ও রবি সিম কার্ড ছাড়া অন্য কোম্পানির নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যায় না।
৫. পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে আনুন।
৬. অনুনোমদিত কোন জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৭. পরিবেশ পরিস্কার রাখুন, মনে রাখবেন একজন প্রকৃত পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমী কখনো পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে না।
৮. স্যালাইন, প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, স্যাভলন ও মশার অত্যাচার থেকে বাঁচার ক্রিম সাথে করে নিয়ে আসবেন।
ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। নিজে ভালো থাকুন, প্রাণের দেশটাকে ভালো রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য মনকে টানে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার! বাংলাদেশ দেখার মিশনে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, এবার স্থির করলাম পাহাড়ে যাব। শুধুই পাহাড় দেখবো আর ট্র্যাকিং করবো! গ্রুপের একজন বললো তাহলে কেওক্রাডং যাওয়া যাক, জায়গাটা আমার মাথাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ, কিন্তু কাউকে বলছিলাম না দুর্গম আর ব্যয়বহুল ট্যুর হবে মনে করে! লুফে নিলাম প্রস্তাব। এক সময় এই কেওক্রাডংকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মনে করা হলেও বর্তমানে এটাকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধরা হয়। যাহোক প্রতিবারের মতো অনেকের ট্যুরমেট হওয়ার কথা থাকলেও এবারও বেশীরভাগই কেটে পড়েছে! শেষমেশ ৬ জনের টিকিট কাটতে পারলাম। ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ৫ মার্চ ২০২০ রাতে। চলুন বিস্তারিত গল্প শুরু করি!
কি কি দেখেছি:
১. বান্দরবান শহর।
২. বান্দরবান-রুমা, রুমা-বগালেক পর্যন্ত রোমাঞ্চকর সড়ক যাত্রা।
৩. রুমা উপজেলা সদর।
৪. বগালেক ও পাড়া।
৫. দার্জিলিং পাড়া।
৬. কেওক্রাডং।
৭. চিংড়ী ঝর্ণা।
৮. শৈরাতংপাড়া ভিউ পয়েন্ট।
ঢাকা-বান্দরবান-রুমা: ভ্রমণ মৌসুম ও সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবস হওয়ায় আমরা সরাসরি বান্দরবানের টিকেট পাইনি। ঢাকা-বান্দরবান বাস ভাড়া নন-এসি ৬৫০ টাকা।কয়েকটি স্ট্যান্ড ঘুরে অবশেষে সায়দাবাদ থেকে চট্টগ্রামে রাতের বাস টিকেট কাটলাম। চট্টগ্রাম পৌঁছেছিলাম খুব ভোরে। নন-এসি ৪২০ টাকা ভাড়া নিয়েছিল ইউনিক পরিবহন। হানিফ, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ কয়েকটি কোম্পানির বাস এ রুটে চলাচল করে। সরাসরি বান্দরবানের টিকেট না পেলে আপনাকে চট্টগ্রাম হয়েই যেতে হবে। সকালের নাস্তা সেরে বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল থেকে বান্দরবানগামী সকাল সাড়ে ৭টার বাস ধরেছিলাম। পূর্বাণী ও পূরবী নামের ২টি কোম্পানির বাস ৩০মিনিট পরপর চট্টগ্রাম-বান্দরবান রুটে চলাচল করে। ভাড়া ১৩০ টাকা, সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। বান্দরবান নেমেই রওনা হলাম রুমা বাসস্ট্যান্ডের দিকে, অর্থাৎ যেখান থেকে রুমার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। অটো ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। বান্দরবান থেকে রুমা উপজেলা সদরের দুরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মতো, সময় লাগবে ৩-৩.৫ ঘন্টা। ভাড়া ১১০ টাকা করে। চাঁন্দের গাড়ী রিজার্ভ নিয়েও যেতে পারবেন তবে খরচ অনেক বেশী পড়বে। পাহাড়ি উঁচুনিচু সরু রাস্তা বেয়ে আমাদের বাস রুমা পৌছালো দুপুর দেড়টার দিকে। রুমা পৌছার আগেই একবার আপনাকে সেনা চেকপোস্টে নেমে গ্রুপের সবার নাম ঠিকানা লিখতে হবে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে গড়ে উঠেছে ছোট্ট শহর রুমা। দুরের উঁচু পাহাড় থেকে রুমা শহরটাকে অসাধারণ লাগে।
রুমা-বগালেক: নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে গেলাম রুমা গাইড সমিতির অফিসে, সেখান থেকে গাইড ভাড়া করতে হলো আর একটি ফরমে গ্রুপের সকল সদস্যের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লিখতে হলো। আমরা ২ রাত ৩ দিন থেকেছিলাম গাইড ভাড়া পড়েছিল ২,৬০০ টাকা, ফরমের শুভেচ্ছা মূল্য ১০০ টাকা। বার-বি-কিউ করে দেওয়ার জন্য কিছু বকশিস দিবেন আপনার গাইডকে। ভাড়া করার পর থেকে সকল কাজে গাইড আপনাকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবে। এরপর দ্রুত চলে গেলাম রুমা আর্মি ক্যাম্পে, এখান থেকেই কেওক্রাডং যাওয়ার অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি পাওয়ার পর স্ট্যান্ডে গিয়ে চাঁন্দের গাড়ী ভাড়া করলাম। এ
রুটে একমাত্র বাহন চাঁন্দের গাড়ী, অন্য কোন গাড়ী এ রুটে চলে না। অন্য গাড়ী চলে না বললে ভুল হবে, বলতে হবে অ্যাডভেঞ্চার বা ড্যাঞ্জারাস রোড হওয়ার কারনে অন্য গাড়ী চলতে পারে না।
চাঁন্দের গাড়ী, সেনাবাহিনীর জীপ ও কদাচিৎ দুয়েকটা মটর সাইকেল চোখে পড়েছে ৩ দিন অবস্থান করে। আমাদের সমতলের কোন বাইকার ওই রোডে বাইক চালাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাসে আসে না! যা হোক বগালেক পর্যন্ত নির্ধারিত চাঁন্দের গাড়ী ভাড়া ২,২০০ টাকা। আমাদের গ্রুপ ছোট হওয়ায় আমরা আরেকটা ছোট গ্রুপকে সাথে নিয়েছিলাম, এতে একটু সাশ্রয় হয়েছিল। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন, বান্দরবান থেকে রুমা এবং রুমা থেকে বগালেক এই রুটে বেলা ৩টার পর গাড়ী চলাচল নিষিদ্ধ। দুর্গম এলাকা বিধায় নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় ৩টা থেকে সকাল পর্যন্ত কোন গাড়ী চলতে দেয়া হয় না। সাধারনত এক দিনেই কেওক্রাডং পৌছানো সম্ভব হয় না, তাই বগালেকে রাতে থাকতে হয়। রুমা-বগালেক দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার, সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো। রুমা ট্যুরিস্ট পুলিশ চেকপোস্টে নেমে নাম ঠিকানা লিখে রওনা হলাম রোমাঞ্চকর এক গাড়ী ভ্রমণে। রুমা থেকে বগালেক পর্যন্ত রাস্তাটা এতটাই রোমাঞ্চকর যা লেখনির বর্ণনায় ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। রাস্তাটা এতটাই উঁচুনিচু যে এটা অনেক সময় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত উপরে উঠে গেছে আবার ১ কিলোমিটার পর্যন্ত খাঁড়া নিচে নেমে গেছে! দারুণ এ রাস্তা তৈরী করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চলার সময় রাস্তার দুই পাশের পাহাড়গুলো এবং এর খাঁজকাটা দৃশ্য আপনার মনের কষ্ট ভুলিয়ে দেবে নিশ্চিত। এভাবে চলতে চলতে কখন বগালেক পৌছাবেন টেরই পাবেন না!
বগালেক, থাকা-খাওয়া: গাইডকে রুমা থাকতেই বলেছিলাম আমরা দুপুরের খাবার বগালেকে গিয়ে খাব, গাইড সে মোতাবেক বগালেকে ফোনে খাবারের অর্ডার দিয়েছিল। কেওক্রাডং অভিযানে এসে বগালেকে রাত্রিযাপন না করলে অনেক কিছুই মিস করবেন। বগালেক সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১,১০০ ফুট, গভীরতা ১০০ ফুটের বেশী। এই লেক সম্পর্কে স্থানীয় আদিবাসীরা নানা কিংবদন্তী বিশ্বাস করে। বগালেক পাড়ায় নেমেই গাইডকে সাথে নিয়ে গেলাম আর্মি ক্যাম্পে সেখানে রিপোর্ট করে এসে হোটেল ভাড়া করলাম।
রুম ভাড়া রাতপ্রতি ১৫০ টাকা। খাবার হিসেবে পাবেন ভাত, ডিম, মুরগী, ডাল, সবজি আর ভর্তা। একবেলা খেতে খরচ হবে ১২০-১৫০ টাকা। গাইডের থাকা ও খাওয়ার খরচ আমাদেরই বহন করতে হয়েছে। বগালেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি গ্রাম, বগালেক পাড়া। ছিমছাম পরিস্কার একটি পাড়া। এখানকার মানুষগুলো সবাই বোম সম্প্রদায়ের। আচরণ ও অতিথিপরায়ণতা অতুলনীয়। রাতের খাওয়া শেষ করে বগালেকের শান বাঁধানো পাড়ে বসে রাতটা উপভোগ করতে পারেন। চর্তুদিকে নির্জন আর মায়াবী এক পরিবেশ।
বগালেক-দার্জিলিং পাড়া-কেওক্রাডং: রাতে সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম সকাল ৮ টার মধ্যে ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে কেওক্রাডং রওনা হবো এবং এদিনই বগালেকে ফিরবো এবং এখানেই রাতে থাকবো। সকালের নাস্তা সেরে গেলাম আর্মি ক্যাম্পে, অনুমতি নিয়ে ১০ টাকার বিনিময়ে একটা বাঁশের লাঠি কিনে সবাই হাটা শুরু করলাম কেওক্রাডংয়ের দিকে।
বগালেক থেকে কেওক্রাডংয়ের দুরত্ব ১৩ কিলোমিটার। পুরোটা পাহাড়ি পথ আমাদের হাঁটতে হবে। চাইলে গাড়ীতেও যেতে পারবেন, তবে গাড়ীতে গেলে আসল মজা পাবেন না। একটু এগোলেই পাকা রাস্তা শেষ, চলতে হবে ঝিরি পথে আর কেনা বাঁশের লাঠিতে রাখতে হবে শরীরের ভারসাম্য। প্রায় ৪ ঘন্টার মতো সময় লাগবে কেওক্রাডং পৌছাতে। পথে কোন দোকান পাবেন না, একটা ঝর্ণা পাওয়া যায় যেখান থেকে খাবার পানি নেয়া যায়। ঝর্ণাটির নাম চিংড়ী ঝর্ণা। বর্ষাকালে ঝর্ণাটি দারুণ রুপ ধারণ করে।
আমরা শুকনো খাবার ও পানি সাথেই রেখেছিলাম। ব্যাগ সংখ্যা কমিয়ে বগালেকে হোটেলে রেখে গিয়েছিলাম, কারন পাহাড়ি হাটা পথে বাড়তি ওজন বহন করে শক্তি অপচয় করার কোন মানে হয় না। চলার পথে দেখতে পাবেন পাহাড়ের অতুলনীয় নির্জন সৌন্দর্যরূপ। চারিদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের ফাঁক গলে আসে হিমেল হাওয়া। অদ্ভূত ভালোলাগা কাজ করবে আপনার মনে। উঁচু পাহাড়ের গাঁ ঘেষে হাঁটতে হয়, নিচে দৃষ্টির বাইরের গভীরতা! কিছুদূর চলা একটু বিশ্রাম নেয়া এভাবে চলতে চলতে সাড়ে ১১টার দিকে পৌছে গেলাম দার্জিলিং পাড়া। গাইডকে দিয়ে দার্জিলিং পাড়ায় খাবারের অর্ডার দিলাম, আমরা কেওক্রাডং থেকে ফিরে আসার সময় দুপুরের খাবার খাবো।
দার্জিলিং পাড়া সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলতেই হবে! দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন পাহাড়ি গ্রাম দার্জিলিং পাড়া। কোথাও কোন নোংরা,ময়লা,আবর্জনা পাবেন না। এখানে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে, অনেকে দার্জিলিং পাড়ায় রাতে অবস্থান করে। স্থানীয় মানুষগুলোর ব্যবহার অসাধারণ। দার্জিলিং পাড়া থেকে কেওক্রাডং ২ কিলোমিটার দূরে, সময়ের হিসেবে ৩০ মিনিট। দার্জিলিং পাড়া থেকে একদম খাঁড়া উঠতে হয় কেওক্রাডং চূঁড়ায়।
অবশেষে পৌছালাম কেওক্রাডং চূঁড়ায়, সবার চোখেমুখে বিজয়ের আনন্দ! মনে হচ্ছে সবাই কিছু একটা করে ফেলেছে! কেওক্রাডং চূঁড়াটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,১০০ ফুট উঁচু। এখান থেকে আশেপাশের পাহাড় ও দূরের পাড়াগুলোর ভালো ভিউ পাওয়া যায়। ছবি তোলার এক পারফেক্ট জায়গা! তবে বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন রুমা বাজার পর্যন্ত। এজন্য সাথে অতিরিক্ত ব্যাটারি কিংবা পাওয়ার ব্যাংক আনতেই হবে! নইলে আপনার ফোন কেওক্রাডং চূঁড়ায় পৌছার আগেই মারা যাবে! কেওক্রাডংয়ে আর্মি ক্যাম্প রয়েছে, রয়েছে একটি হেলিপ্যাড।
সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত কটেজে রাত্রিযাপন করার ব্যবস্থাও আছে। কেওক্রাডং থেকে আরো গভীরে যাওয়ার অনুমতি নেই, আপনার আমার নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। তাই এসব মেনে চলতে হবে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন চূঁড়াটিতে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। ঘন্টা দুয়েক অবস্থান করে আবার নামতে শুরু করলাম। নিরাপত্তার জন্য দুপুর ২-৩ টার পর পর্যটকদের কেওক্রাডং ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয় না, তাই সময়ের হিসেবটা রাখতে হবে।
দার্জিলিং পাড়ায় দুপুরের খাবার খেয়ে আবার রওনা হলাম বগালেকের উদ্দেশ্যে। দার্জিলিং পাড়ার জুম চালের ভাত আর রান্না সবজির কথা কখনো ভুলবো না! দার্জিলিং পাড়ায় সরবরাহ করা ঝর্ণার পানি দেশের সেরা পানি! বগালেক পাড়ায় পৌছাতে পৌছাতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে পাহাড়ের নির্ভেজাল কলা আর পেঁপে খেয়ে গোসলের জন্য নেমে পড়লাম বগালেকের স্বচ্ছ পানিতে। গাইডকে বলে রুমা বাজার থেকে মুরগী আনালাম বার-বি-কিউ করার জন্য। রাতে বার-বি-কিউ পার্টি শেষে সারাদিনের খাটুনির ধকল নিয়ে এক শান্তির ঘুম দিলাম সবাই।
সকালে উঠে নাস্তা সেরে সেনা ক্যাম্পে রিপোর্ট করলাম। চাঁন্দের গাড়ী ভাড়া করে ফিরলাম রুমা উপজেলা সদরে। ভাগ্যক্রমে বাসের বিরক্তিকর জার্নি থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। কারন রুমা বাজারে বান্দরবানগামী একটা চাঁন্দের গাড়ী পেয়ে ছিলাম। গাড়ীটি মালামাল আনলোড করে রুমা থেকে বান্দরবান ফিরছিল। গাইড কথা বলে অল্প টাকাতেই ম্যানেজ করে দিয়েছিল। আমরা বান্দরবান শহরের আশেপাশের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলো যেমন শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণ মন্দির সহ কয়েকটি স্পট দেখেছিলাম এবং বান্দরবান থেকে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলাম, এসব নিয়ে আরেকটি লেখা লিখবো। আপনি চাইলে এক ট্যুরেই সব এসব জায়গা দেখে ঢাকায় ফিরতে পারেন অথবা সরাসরি বান্দরবান এসে স্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকার টিকেট কেটে সরাসরি চলে আসতে পারেন। আপনার ইচ্ছা। আজীবন মনে রাখার মতো একটা ট্যুর ছিল এই কেওক্রাডং অভিযান। হোটেল, রিসোর্ট কিংবা গাইডের যোগাযোগ নাম্বার লাগলে জানাতে পারেন, সহযোগীতা করতে পারবো ইনশাল্লাহ্।
কিছু জরুরী কথা:
১. পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বান্দরবান-রুমা, রুমা-বগালেক, বগালেক-কেওক্রাডং পথে বেলা ৩টার পর চলাচলের কোন অনুমতি পাবেন না। গাড়ীও চলে না, অতএব সময় সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ফেরার পথেও একই অবস্থা।
২. পাহাড়ে বেশীরভাগই আদিবাসীদের বসবাস। তাদের জীবনাচরণ ও সংস্কৃতিকে কোন ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। তাদের সাথে ভালো আচরণ করুন। তারা অনেক ভালো মনের মানুষ ও সাহায্যকারী।
৩. কোন সমস্যায় পড়লে ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর সহযোগীতা নিন। তারা সদা প্রস্তুত সহযোগীতা করতে।
৪. এসব এলাকায় টেলিটক ও রবি সিম কার্ড ছাড়া অন্য কোম্পানির নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যায় না।
৫. পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে আনুন।
৬. গাইডকে না জানিয়ে কোন জায়গায় একা যাবেন না, গহীন অরণ্য হওয়ায় বিপদ হতে পারে, সতর্ক থাকুন। অনুনোমদিত কোন জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৭. পরিবেশ পরিস্কার রাখুন, মনে রাখবেন একজন প্রকৃত পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমী কখনো পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে না।
৮. স্যালাইন, প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, স্যাভলন ও মশার অত্যাচার থেকে বাঁচার ক্রিম সাথে করে নিয়ে আসবেন।
ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। নিজে ভালো থাকুন, প্রাণের দেশটাকে ভালো রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
আমাদের বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, এর পাশাপাশি রয়েছে বাঙালীর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। এ অঞ্চলে সংগঠিত হয়েছে অনেক যুদ্ধ , রচিত হয়েছে ইতিহাস।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সুদীর্ঘ প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলা বগুড়া। আজ বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানাব এবং এসব স্থান কিভাবে ভ্রমণ করবেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন সব সব কিছু জানাব। চলুন পর্যটন নিয়ে আলোচনার আগে জেলা বগুড়া সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক তথ্য জেনে নেই।
বগুড়া জেলা:
দেশের প্রাচীনতম জেলা গুলোর বগুড়া একটি। ১৮২১ সালে বগুড়া জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জয়পুরহাট জেলা বগুড়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল, ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের সময় জয়পুরহাট পৃথক জেলার মর্যাদা লাভ করে। বগুড়া উত্তরবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর। বগুড়া রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভূক্ত। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এখানে ছোট ও মাঝারি ধরনের প্রচুর শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বগুড়া শহরের আয়তন ৭১.৫৬ বর্গকিলমিটার। বর্তমানে ভোটার বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা এখন বগুড়া। এখানে “শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম” নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, যা উত্তরাঞ্চলের কয়েকটা জেলার মানুষের উন্নত চিকিৎসার অন্যতম আশ্রয়স্থল। জেলার প্রাচীনতম ইতিহাস রয়েছে। বগুড়া জেলা পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল। যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। শহরে থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত, যা একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সেসময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান বগুড়ার গাবতলীতে জন্মগ্রহণ করেন।
অবস্থান:
বগুড়া শহর করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত ।করতোয়া নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বগুড়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে । বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, পশ্চিমে নওগাঁ জেলা, দক্ষিনে সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পুর্বে যমুনা নদী ।
বগুড়া জেলা ১২ টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহত্তর প্রাচীন জেলা।
আয়তন:
বগুড়া জেলার আয়তন ২৮৯৫.০১ বর্গকিলোমিটার।
উপজেলা সমূহ:
১.ধুনট
২.শেরপুর
৩.নন্দীগ্রাম
৪.বগুড়া সদর
৫.শিবগঞ্জ
৬.কাহালু
৭.সোনাতলা
৮.সারিয়াকান্দী
৯.শাহজাহানপুর
১০.গাবতলী
১১.দুপচাঁচিয়া
১২.আদমদীঘি।
উল্লেখযোগ্য নদ-নদী:
করতোয়া
বাঙ্গালী
যমুনা
নাগর
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
১.প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮), ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের নেতা ।
২.মোহাম্মদ আলী (মৃত্যু ১৯৬৯), কূটনীতিক এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ।
৩.মেজর জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১) বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি।
৪.খাদেমুল বাশার (১৯৩৫-১৯৭৬), বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনী প্রধান ।
৫.আখতারুজ্জমান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭), সাহিত্যিক ও গল্পকার ।
৬.গাজিউল হক (১৯২৯-২০০৯), ভাষা সৈনিক।
৭.এম. আর. আখতার মুকুল (১৯২৯-২০০৪), লেখক এবং সাংবাদিক ।
৮.মুশফিকুর রহিম, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ।
অনেক তথ্য তো দিলাম,এখন চলুন জেনে নেই কি দেখবেন বগুড়ায় আর আসবেনই বা কিভাবে।
দর্শণীয় স্থান:
করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে সুফি, লালন, মারাঠি সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বগুড়া জেলাকে বলা হয় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। পর্যটন সমৃদ্ধ বগুড়া জেলার দর্শনীয় ভ্রমণ স্থানগুলো-
১.শাহ সুলতান (র.) এর মাজার শরিফ
২.ভাসু বিহার
৩.মহাস্থান জাদুঘর
৪.বেহুলা লখিন্দরের বাসর ঘর
৫.গোবিন্দ ভিটা
৬.নওয়াব প্যালেস
৭.খেরুয়া মসজিদ
৮.পশুরামের প্রাসাদ
৯.ভবানীপুর মন্দির ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
১০. শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম (উত্তরাঞ্চলের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেণ্যু)।
আপনি ঢাকা থেকে বগুড়ায় সড়ক ও রেল পথ এই দুই উপায়ে আসতে পারবেন।
বিমানবন্দর থাকলেও বর্তমানে এটা বন্ধ আছে। ঢাকা থেকে বগুড়ার সড়ক যোগাযোগ খুবই ভালো, বর্তমানে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক চারলেনে উন্নতীকরণের কাজ চলছে এটা হয়ে গেলে অতি অল্প সময়ে, সহজে বগুড়া আসতে পারবেন।
বাসে ভ্রমণ করলে:
ঢাকার গাবতলী, কল্যানপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলী, এর আর ট্রাভেলস, মানিক, শাহ ফতেহ্ আলী, এনা, টি আর সহ অনেক পরিবহন কোম্পানির বাস বগুড়ার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায়। এসি, নন-এসি, ডিলাক্স ভাড়া পড়বে ৩০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। একটু কম খরচে যেতে চাইলে টেকনিক্যাল মোড়ের আল মাহমুদ ফিলিং স্টেশন থেকে আর কে ট্রাভেলস এর বাসে চেপে বসতে পারেন, ভাড়া নিবে ২০০ টাকা। সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা।
ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে:
ঢাকা থেকে বগুড়ায় ট্রেনেও আসতে পারবেন, তবে বাস যাত্রার চেয়ে সময় একটু বেশী লাগবে। কারণ ঢাকা থেকে বগুড়ার ট্রেন নাটোর-সান্তাহার স্টেশন হয়ে ঘুর পথে বগুড়ায় প্রবেশ করে ফলে সময় একটু বেশী লাগবে।
কোথায় থাকবেন:
বগুড়া শহরেই অবস্থান করে পুরো বগুড়া ঘুরে দেখতে পারবেন। বগুড়ায় থাকা সংক্রান্ত কোন ঝামেলাতেই আপনাকে পড়তে হবে না। উত্তরাঞ্চলের চার তারকা ও পাঁচ তারকা মানের দুটি হোটেল শুধু বগুড়াতেই রয়েছে। রয়েছে পর্যটন মোটেল, জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। সার্কিট হাউজ ও ডাকবাংলোতে থাকতে হলে আপনাকে অগ্রীম অনুমতি সাথে আনতে হবে। তাছাড়া বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্দ্যোগে প্রতিষ্ঠিত উন্নতমানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে বগুড়ায়। ২০০-৮০০০ টাকায় এসব হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
খাবেন কি! :
বগুড়ায় ভালো মানের অনেক খাবার হোটেল রয়েছে। হোটেল আকবরিয়ার সুনাম দেশজুড়ে। বগুড়ার আসলেন আর দই খেলেন না তা হতে পারে না। বগুড়ার দইয়ের সুনাম বিশ্বময়। দই ও লাল মরিচ জেলার ব্র্যান্ড। তাছাড়া বগুড়ার মিস্টি, মহাস্থানের কটকটি পরখ করতে ভুলবেন না। এসব হোটেলে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার আরাম করে খেতে পারবেন।
চলুন এবার ঘুরে বেড়াই!
মহাস্থান ঘুরে দেখতে হলে;
মহাস্থানগড় মূলত বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ভাসু বিহার, পরশুরামে প্রাসাদ, বেহুলা লখিন্দরের বাসর ঘর, গোবিন্দ ভিটা, মহাস্থানগড় জাদুঘর, শাহ্ সুলতান (র.) এর মাজার শরিফ দেখতে চাইলে প্রথমে আপনাকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় আসতে হবে। অটোরিক্সা বা সিএনজি রিজার্ভ করে নিয়ে উপরের স্থান গুলো দেখতে পারবেন। শহরের অন্যান্য জায়গা থেকেও সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ করতে পারবেন। লোকসংখ্যা কম থাকলে বা বাজেটে ঘাটতি থাকলে রিজার্ভ না করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গাড়ি ধরেও ভ্রমণ করতে পারবেন। এখানে আপনি প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুন্ড্রবর্ধণ নগরীর অনেক ধ্বংসাবশেষ সহ নানান স্থাপনা দেখতে পাবেন। পুরো একটা দিন চলে যাবে উপরে উল্লেখ করা স্থান গুলো দেখতে।
নওয়াব প্যালেস মিউজিয়াম:
এটা সাতমাথা থেকে দুই মিনিটের হাটা পথ, সাতমাথা থেকে পূর্ব দিকে শহীদ খোকন পৌর পার্ক এবং সার্কিট হাউজের পাশেই নবাববাড়ী রোডে প্যালেস মিউজিয়ামটির অবস্থান। ৫০ টাকায় টিকিট কেটে আপনি ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার এবং পাকিস্থানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। বিনোদনের জন্য বেশ কিছু আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে আদিম গুহা!
খেরুয়া মসজিদ ও ভবানীপুর মন্দির:
খেরুয়া মসজিদ বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্পদ। মসজিদটি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলায় অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে উপজেলাটির অবস্থান ২০ কিলোমিটার দক্ষিনে, আসতে পারবেন বাসে করে। সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো, সাতমাথা থেকেই বাস পাবেন। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিক্সা ভাড়া করে নিয়ে ঘুরে দেখে আসতে পারবেন ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদ ।
ভবানীপুর মন্দিরটাও শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত, এখানে যেতে পারবেন সিএনজি বা অটোরিক্সা ভাড়া করে।
হাতে সময় থাকলে অবশ্যই আরো যা দেখার চেষ্টা করবেন!
১.বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং শীর্ষস্থানীয় কলেজ সরকারী আযিযুল হক কলেজ ক্যাম্পাস। এর অবস্থান পুরান বগুড়ায়। সাতমাথা থেকে সিএনজিতে পশ্চিমে ৫ টাকার পথ।
২. প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমানের পৈত্রিক নিবাস। এটা জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাটি গ্রামে অবস্থিত। যেতে পারবেন সিএনজিতে, সিএনজি পাবেন শহরের ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে।
৩.বাংলাদেশ মসলা গবেষনা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। মহাস্থানগড় জাদুঘর থেকে অল্প দুরত্বের পথ, কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন।
৪.প্রেম যমুনার ঘাট ও কালীতলা ঘাট। ঘাট দুটোর অবস্থান জেলার সারিয়াকান্দী উপজেলায়। আসতে পারবেন বাস বা সিএনজিতে। এখানে বসে বসে আপনি যমুনার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
অন্যান্য জেলার মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার শরীয়তপুর জেলা। আজ আলোচনা করবো শরীয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থান নিয়ে। জানাব কি দেখবেন শরীয়তপুরে, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন ইত্যাদি। তবে তার আগে চলুন জেলা শরীয়তপুর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক তথ্য জেনে নেয়া যাক।
শরীয়তপুর জেলা:
শরীয়তপুর জেলা পূর্বে বৃহত্তর বিক্রমপুরের অংশ ছিল। ১৮৬৯ সালে প্রশাসনের সুবিধার্থে এটাকে বাকেরগঞ্জ জেলার অংশ করা হয়। কিন্তু এ অঞ্চলের জনগণের আন্দোলনের মুখে ১৮৭৩ সালে এ অঞ্চলকে মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্গত করে ফরিদপুর জেলার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সবশেষ প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের সময় ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ শরীয়তপুরকে জেলার মর্যাদা প্রদান করা হয়। শরীয়তপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। বর্তমানে ছয়টি উপজেলার সমন্বয়ে শরিয়তপুর জেলার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আয়তন:
শরীয়তপুর জেলার আয়তন ১১৮১.৫৩ বর্গকিলোমিটার।
অবস্থান:
এই জেলার উত্তরে মুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা, পুর্বে চাঁদপুর জেলা এবং পশ্চিমে মাদারিপুর জেলা। শরীয়তপুর মূলত চর এলাকা।
উপজেলা সমূহ:
১.জাজিরা
২.শরীয়তপুর সদর
৩.গোসাইরহাট
৪.ডামুড্যা
৫.ভেদরগঞ্জ
৬.নড়িয়া
উল্লেখযোগ্য নদ-নদী:
শরীয়তপুর জেলা কীর্তিনাশা নদীর তীরে অবস্থিত।
অন্যান্য নদী গুলো;
১.পদ্মা
২.মেঘনা
৩.দামুদিয়া
৪.আরিয়াল খাঁ
আবার এসব নদীর অসংখ্য শাখা নদীও রয়েছে।
কিভাবে আসবেন?
ঢাকা থেকে শরীয়তপুরে আসতে আপাতত সড়ক ও নৌপথই একমাত্র ভরসা। তবে পদ্মা সেতুর কাজ হয়ে গেলে এবং সেতুতে রেললাইন যুক্ত হলে ট্রেনেও আসতে পারবেন শরীয়তপুর। ঢাকা থেকে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরীঘাট হয়ে বাসে করে শরিয়তপুর আসতে পারবেন, সময় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে। আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গেও শরীয়তপুর আসতে পারবেন। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া (শিমুলিয়া ঘাট) পর্যন্ত বাসে এসে সেখান থেকে ফেরী/লঞ্চ/স্পীডবোটে করে প্রমত্তা পদ্মা নদী পার হয়ে মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরীঘাট আসবেন। সেখান থেকে শরীয়তপুরগামী বাসে চড়তে পারবেন, আমরা এ রুটটাই ব্যবহার করেছিলাম। মিরপুর ১২ থেকে স্বাধীন, গাবতলী থেকে বসুমতী, আব্দুল্লাহপুর থেকে প্রচেষ্টা সহ বেশ কিছু বাস মাওয়া ঘাটে আসে, ভাড়া নেবে ৯০-১২০ টাকা। মাওয়া ঘাট পর্যন্ত সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো।
থাকার ব্যবস্থা:
শরীয়তপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল পাবেন, কম বাজেটের হোটেলও পাবেন। খরচ পড়বে ২০০-১০০০ টাকার মতো। উপজেলা সদরগুলোতে থাকার ব্যবস্থা আছে কিনা জানা নেই। তাছাড়া রয়েছে জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, এসব জায়গায় থাকতে আপনার আগাম অনুমতি সাথে আনতে হবে।
খাবার ব্যবস্থা:
খাবার বিষয়ক কোন ঝামেলা নেই। জেলার সবখানেই সাধ্যের মধ্যে সকাল,দুপুর,রাতের জন্য ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পাবেন।
চলুন এবার ঘুরে বেড়াই!
সে অর্থে তেমন জনপ্রিয় কোন ভ্রমণ এলাকা শরীয়তপুরে নেই, তবে যথেষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জেলা এটা। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে, সেতু হয়ে গেলে এলাকার পর্যটন নতুন মাত্রা পাবে এমন আশা করাই যায়। ঘোরা শুরু করুন তবে…..
সুরেশ্বর দরবার শরীফ:
নড়িয়া উপজেলায় অবস্থিত।
মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম:
নড়িয়ার কেদারপুর ইউনিয়নের কলুকাঠি গ্রামে এটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মাছের এ্যাকুরিয়াম। তাছাড়া এখানে চিড়িয়াখানা সহ শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। শরীয়তপুর জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটা সকলের কাছে পরিচিত।
বুড়ির হাট মসজিদ ও বুড়ির হাট মুন্সী বাড়ী:
দুটোরই অবস্থান ডামুড্যা উপজেলায়।
রুদ্রকর মঠ:
অবস্থান শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে।
মহিষারের দীঘি :
দক্ষিণ বিক্রমপুর।
হাটুরিয়া জমিদার বাড়ি:
গোসাইরহাট উপজেলায় জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।
রাম সাধুর আশ্রম:
নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নে এর অবস্থান।
মানসিংহের বাড়ী:
নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুরে অবস্থিত।
শস্য-শ্যামলা আমাদের মাতৃভূমির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এমনই এক জেলা গোপালগঞ্জ। প্রকৃতির মায়া আর ইতিহাসের মিশেলে গোপালগঞ্জ জেলা এক কথায় অসাধারন! গোপালগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করবো, জানাবো কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন তবে তার আগে জেলা গোপালগঞ্জ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশাসনিক তথ্য জেনে নেই।
গোপালগঞ্জ জেলা:
১৮৭২ সালে মাদারীপুর মহকুমায় গোপালগঞ্জ নামক একটি থানা গঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থেকে পৃথক করে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙ্গে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়। গোপালগঞ্জ এবং কোটালীপাড়া থানার সঙ্গে ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানাকে নবগঠিত গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯২১ সালে গোপালগঞ্জ শহরের মানে উন্নীত হয়। আদমশুমারি অনুযায়ী তখন গোপালগঞ্জ শহরের লোকসংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪ শত ৭৮ জন মাত্র। ১৯৭৪ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানাকে ভেঙ্গে টুঙ্গিপাড়া নামক একটি থানা গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ সরকার কর্তৃক প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের সময় গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। এই গোপালগঞ্জেই জন্মগ্রহন করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সমাধী জেলার টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত।
বর্তমানে ৫টি উপজেলার সমন্বয়ে গোপালগঞ্জ জেলার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অবস্থান:
গোপালগঞ্জ জেলার উত্তরে ফরিদপুর জেলা, দক্ষিণে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা, পূর্বে মাদারীপুর ও বরিশাল জেলা এবং পশ্চিমে নড়াইল জেলা অবস্থিত ।
আয়তন:
গোপালগঞ্জ জেলার আয়তন ১৪৮৯.৯২ বর্গ কিলোমিটার।
জেলার উপজেলা সমূহ:
১.টুঙ্গিপাড়া
২.কাশিয়ানী
৩.গোপালগঞ্জ সদর
৪.মুকসুদপুর
৫.কোটালিপাড়া
উল্লেখযোগ্য নদীসমূহ:
অনেক নদী সমৃদ্ধ জেলা গোপালগঞ্জ;
১.মধুমতি
২.বাঘিয়ার নদী
৩.ঘাঘর
৪.পুরাতন কুমার
৫.বিলরুট ক্যানেল (কৃত্তিমভাবে তৈরি করা হয় ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে)
৬.কালিগঙ্গা
৭.টঙ্গীখাল
৮.দিগনার
৯.বাগদা
১০.কুশিয়ারা
১১.মধুপুর
১২.শৈলদহ
১৩.ছন্দা
দর্শনীয় স্থান:
১.জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধী সৌধ কমপ্লেক্স।
২.ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি।
৩.জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ী।
৪.অন্যন্যা চন্দ্র ঘাট, গোপালগঞ্জ সদর।
৫.উলপুর জমিদার বাড়ী।
৬.বধ্যভূমি স্মৃতি সৌধ, গোপালগঞ্জ সদর।
৭.বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
কিভাবে আসবেন?
ঢাকা থেকে দুই পথে আপনি গোপালগঞ্জে আসতে পারবেন। রেলপথে আসতে পারবেন টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত। নতুন রেল লাইন নির্মান করা হয়েছে রাজবাড়ি থেকে গোপালগঞ্জ শহর হয়ে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত। তাছাড়া সড়ক পথে আসতে পারবেন দুইটা ওয়েতে। মিরপুর ১২ থেকে স্বাধীন, গাবতলী থেকে বসুমতী, আব্দুল্লাহপুর থেকে প্রচেষ্টা সহ বেশ কিছু বাস মাওয়া ঘাট যায়, ভাড়া ৯০-১২০ টাকা। ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরীঘাটে আসবেন। সেখান থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস বাস পাবেন,অন্য বাস কোম্পানির বাসও পাবেন। কোন কোন বাসে উঠলে নামতে হবে গোপালগঞ্জে, আর কোন কোন বাস যায় টুঙ্গিপাড়া। ভাড়া ২০০-২৫০ এর মতো, সময় লাগবে ৩-৪ ঘন্টা। ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসে আসলে ভাড়া ৩৫০ টাকা পড়বে। মটর সাইকেল ভাড়াও পাবেন কাঁঠালবাড়ী ঘাটে, ভাড়া নিবে ১২০০-১৫০০ টাকা। সময় লাগবে ২ঘন্টার মতো। সময় স্বল্পতার কারনে আমরা মটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েছিলাম। আবার পাটুরিয়া ফেরীঘাট দিয়ে ফরিদপুর হয়ে গোপালগঞ্জে আসতে পারবেন। সাধারণত গোপালগঞ্জের মানুষ এই রুটটাই বেশী ব্যবহার করে, ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকা। পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে, পদ্মা সেতু হয়ে গেলে মাওয়া-জাজিরা রুটটাই বেশী ব্যবহৃত হবে। ঢাকার ছোট-বড় কয়েকটি স্ট্যান্ডে বাস পাবেন। চাইলে আগে পাটুরিয়া যেতে পারেন, তারপর লঞ্চে ফরিদপুর পৌছে গোপালগঞ্জের বাস ধরতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
গোপালগঞ্জ শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল পাবেন, কম বাজেটের হোটেলও পাবেন। খরচ পড়বে ২০০-১৮০০ টাকার মতো। চাইলে টুঙ্গিপাড়াতেও থাকতে পারেন, থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তাছাড়া রয়েছে জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, এখানে থাকতে আপনার আগাম অনুমতি সাথে আনতে হবে।
খাবার ব্যবস্থা:
খাবার সংক্রান্ত কোন ঝামেলা নেই। জেলার সর্বত্র সাধ্যের মধ্যে ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পাবেন।
অভ্যন্তরীণ যানবাহন:
বাস, অটোরিক্সা, ম্যাক্সি, অটোভ্যান, রিক্সা, মটর সাইকেল ইত্যাদি বাহনে প্রয়োজন মেটাতে পারবেন।
চলুন এবার ঘুরিফিরি!
অনেক বকবক তো করলাম, চলুন এবার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানি….
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধী সৌধ কমপ্লেক্স:
গোপালগঞ্জ হতে বাসে চড়ে টুঙ্গীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে ভ্যান/অটোরিক্সা/ম্যাক্সিতে চড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধী সৌধ কমপ্লেক্সে আসতে পারবেন। এখানে আপনি বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে পারবেন। দেখতে পারবেন বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়ী। বঙ্গবন্ধুর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থান দেখতে পারবেন। এখানে একটি জাদুঘর ও লাইব্রেরী রয়েছে। সুবিশাল লাইব্রেরী থেকে জ্ঞান লাভের সুযোগ রয়েছে। জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে, রয়েছে তথ্য সমৃদ্ধ অনেক কিছু।
জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ী:
ভাটিয়াপাড়া থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে ছোট কাচা রাস্তা ধরে পূর্ব দিকে গেলেই জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ী।
অন্যন্যা চন্দ্র ঘাট:
উপজেলা পরিষদ, গোপালগঞ্জ সদর।
উলপুর জমিদার বাড়ী:
গোপালগঞ্জের কুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে উলপুর যেতে হবে।
বধ্যভূমি স্মৃতি সৌধ:
উপজেলা পরিষদ, গোপালগঞ্জ সদর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস:
ছাত্রছাত্রী বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় এটা। গোপালগঞ্জ জেলা সদরেই এর অবস্থান। মনোরম এই ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পারেন।
বাংলাদেশ পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দেশ। আমাদের মাতৃভূমির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। উত্তরের জনপদ নাটোরের রয়েছে ইতিহাস সমৃদ্ধ পর্যটন এলাকা। নাটোরের পর্যটন নিয়ে আলোচনার আগে চলুন জেলা নাটোর সম্পর্কিত কিছু প্রশাসনিক তথ্য জেনে নিই।
নাটোরঃ
রাজশাহী বিভাগের আওতাধীন প্রশাসনিক অঞ্চল নাটোর। রাজশাহী জেলার অধীনে নাটোর মহকুমা গঠিত হয় ১৮৪৫ সালে। মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। নাটোর পৌরসভা দেশের অন্যতম পুরাতন প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নাটোর ৭নং সেক্টরের অধীন ছিল। এই জেলার উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কমবৃষ্টিপাত হয় নাটোরের লালপুর উপজেলায়। জেলাটি ৭টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত।
প্রধান নদীসমূহঃ
পদ্মা, বড়াল, মরা বড়াল, বারনাই, গুড়। *চলনবিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(নাটোরসহ পার্শ্ববর্তী বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে অবস্থিত চলন বিল হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল।)
দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
১.উত্তরা গণভবন।
২.রাণী ভবানীর রাজবাড়ী।
৩.দয়ারামপুর রাজবাড়ি।
৪.বনপাড়া লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী।
৫.চলন বিল।
৬.চাপিলা শাহী মসজিদ, গুরুদাসপুর।
কিভাবে নাটোর যাবেন-
ঢাকা থেকে বাস যোগেঃ
বাসে করে ঢাকা থেকে নাটোর যেতে বেশ কয়েকটি কোম্পানীর বাস পাবেন। এদের মধ্যে সরকার ট্রাভেলস, গ্রীণ লাইন, দেশ ট্রাভেলস, হানিফ, শ্যামলী এবং ন্যাশনাল পরিবহন উল্লেখ্যযোগ্য। ঢাকার কল্যানপুর, গাবতলী এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরের উদ্দেশ্যে এসব পরিবহণের বাসগুলো নিয়মিতভাবে চলাচল করে। নন-এসি, ডিলাক্স,সাধারণ ও এসির গাড়ির টিকেট মূল্য ৩৮০-৬০০ টাকার মধ্যে। সময় লাগবে ৬ঘন্টার মতো।
ট্রেনযোগে ঢাকা-নাটোরঃ
উত্তরাঞ্চলগামী প্রায় সকল ট্রেনই নাটোর স্টেশনে যাত্রাবিরতী করে। তাই ট্রেন যোগেও সহজে নাটোর যেতে পারবেন। টিকিটের দাম পড়বে ক্যাটাগরী ভেদে ২৭০-৯৫০ টাকা।
বাসস্ট্যান্ড বা রেলস্টেশন, যেখানেই নামুন না কেন উত্তরা গণভবন কিংবা রাণী ভবানীর জমিদার বাড়ি যেতে আপনার রিক্সা বা অটোরিক্সা ভাড়া যাবে ১০-৩০ টাকা।
বগুড়া থেকে নাটোর যাবেন যেভাবেঃ
বগুড়া থেকে নাটোর যেতে অনেক বাস পাবেন। বগুড়া শহরের চারমাথা ও শাকপালা বাসস্ট্যান্ডে একটু দাড়ালেই বাস পাবেন। ভাড়া নিবে ৪০-৫০ টাকা, সময় লাগবে ঘন্টা খানেকের মতো। যাত্রা পথে সিংড়ায় চলন বিল দেখতে পাবেন,এজন্য আপনাকে বর্ষাকালে যেতে হবে। চাইলে ট্রেনে করেও বগুড়া থেকে নাটোর যেতে পারেন। তবে বাস সার্ভিসই ভালো হবে আমার মতে।
কোথায় থাকবেনঃ
নাটোর ট্যুরে এসে থাকার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না! কারণ খুব ভোরে নাটোর পৌছালে সারাদিন প্রধান প্রধান স্পটগুলো ঘুরে চাইলে সন্ধ্যা বা রাতের গাড়িতেই ফিরতে পারবেন। কিন্তু কেউ যদি সময় নিয়ে সব দেখতে চান তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে রাত্রীযাপন করতে হবে। নাটোরে মোটামুটি মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও বোডিং রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল ভি.আই.পি, হোটেল প্রিন্স, হোটেল রুখসানা, হোটেল রাজ, হোটেল মিল্লাত অন্যতম। ভাড়া পড়বে সিঙ্গেল এবং ডাবল কেবিন ২০০-৬০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়াও রয়েছে সার্কিট হাউস, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। তবে আপনাকে এসব জায়গায় থাকতে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
কোথায় খাবেনঃ
নাটোরে খাবার নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই। খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ভালোমানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে সকাল, দুুপুর কিংবা রাতের খাবার আরামে খেতে পারবেন। খাবারের দাম স্বাভাবিক। নাটোরের বিখ্যাত ‘কাচাগোল্লা’ খেতে কিন্তু ভুলবেন না। দারুণ স্বাদের এই মিষ্টান্ন অবশ্যই পরখ করে দেখবেন, এই ‘কাচাগোল্লার’ সুনাম কিন্তু বিশ্বময়!
চলুন এবার নাটোরের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখি!
দিঘাপতিয়ায় প্রতিষ্ঠিত জমিদার বাড়িটি বর্তমানে উত্তরা গণভবন নামকরণ করা হয়েছে। এর আগে এর নাম ছিল গভর্নর হাউজ। নাটোর জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তরা গণভবনটি বর্তমানে উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর স্থানীয় কার্যালয় এবং বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় ৪৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত উত্তরা গণভবন। রাজবাড়িটিতে মোট ১২ টি ভবন রয়েছে,আরো আছে স্বচ্ছ পানির লেক। ফুলে ফুলে সাজানো বাড়িটিতে রয়েছে প্রচুর আমগাছ। বিভিন্ন জাতের বিশাল আকৃতির আমগাছ গুলো দেখতে দারুন। যদি আমের মৌসুমে যান তাহলে বাড়তি আনন্দ পাবেন। টিকিট কেটে প্রবেশ দ্বারের বিশাল গেটটি পার হয়ে ভিতরে ঢুকলেই আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। এখানে বিকেল ৫টার পর অবস্থান করার অনুমতি নেই, তাই সেভাবেই সময় করে চলে আসুন। নাটোর শহরের যে কোন স্থান থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সায় এখানে আসতে পারবেন। উত্তরা গণভবনে সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার।
এবার চলুন যাই জীবনানন্দ দাশের কবিতার বিখ্যাত রাণী ভবানীর রাজবাড়ী। এখানেও টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে এখানে আসা যায়। নাটোর শহরে ঘোরাফেরার জন্য রিক্সা বা অটোরিক্সা রিজার্ভ না করাই ভালো, কারণ শহরের আশেপাশে সব জায়গাতেই এসব গাড়ী চলাচল করে। রাণী ভবানীর জমিদার বাড়িতে আপনি সে সময়ের সকল স্থাপনা দেখতে পাবেন। বড় বড় পুকুর রয়েছে এখানে, আছে শান বাধানো ঘাট। আসলে ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে হয় না, আপনি গিয়ে নিজের মতো করে ঘুরে দেখুন সব। রাণী ভবানীর জমিদার বাড়িতে সম্ভবত বিকেল ৫টার পর অবস্থান করা যায় না।
চলন বিলের যৌবন ভরা রুপ দেখতে আপনাকে ভরা-বর্ষায় যেতে হবে। নাটোর জেলার গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপজেলায় এর বিস্তৃতি। দেশের বৃহৎ এই বিল আপনাকে মুগ্ধ করবে শতভাগ। ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা রিজার্ভ নিতে পারবেন।
চাইলে গোসল করতে পারেন এবং সাতাঁরও কাটতে পারেন। তবে পানিতে নামার আগে ভাবুন আপনি সাতাঁর জানেন কি না! না জানলে পানিতে পা ভিজানোর চিন্তাটাও না করা ভালো।
আমি মূলত নাটোরের প্রধান স্পটগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম, কারণ অামরা এই স্থানগুলোই শুধু ঘুরে দেখেছি। আপনারা অন্যান্য স্পট গুলো দেখতে চাইলে নিজের মতো করে ভ্রমন পরিকল্পনা সাজিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন, ভালো লাগবে। নাটোরের স্পটগুলো দেখতে পরিবহন সংক্রান্ত কোন সংকটে পড়বেন না, সব রুটেই পর্যাপ্ত গাড়ী চলাচল করে।
ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর পর্যটন সম্ভাবনার অঞ্চল। শেরপুরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিত। শেরপুরের পাশাপাশি জামালপুর জেলায়ও বেশ কয়েকটা ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে। একবার ভ্রমনে গেলে আপনি এই দুই জেলা একসাথে ভ্রমন করে আসতে পারবেন। জামালপুর এবং শেরপুর জেলার পর্যটন স্পট,যাতায়াত ব্যবস্থা,খাবার,হোটেল ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার আগে চলুন জেনে নেই জেলা জামালপুর ও শেরপুর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশাসনিক তথ্য। জামালপুরঃ
জামালপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাংশের অঞ্চল, যা এখন ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম তীরে জেলা সদরের অবস্থান। কৃষি পণ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র জামালপুর। জেলাটিতে রেল সংযোগ রয়েছে। তাছাড়া ঢাকার সাথে সড়ক পথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান। দেশের সবথেকে বড় সার কারখানা এখানেই। জামালপুর জেলা ৭টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত। জামালপুর দেশের অন্যতম পুরাতন জেলা। জেলার বুক চিরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাই নদী বয়ে গেছে। জামালপুরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ও গারো পাহাড়, কুড়িগ্রাম জেলা, পূর্বে শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলা এবং পশ্চিমে যমুনা নদীর তীরবতী সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা। শেরপুরঃ
শেরপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। শেরপুর জেলা পূর্বে জামালপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। শেরপুর শহর দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১৯৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলা। শেরপুর জেলায় উপজেলা রয়েছে ৫টি। মহান মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর ও শেরপুর জেলা ১১ নং সেক্টরের অধীন ছিল।
জেলা দুটির দর্শণীয় স্থান সমূহ- জামালপুরঃ
১.দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলস।
২.লাউচাপড়া পিকনিক স্পট-
জায়গাটি জামালপুর জেলার অধীনে হলেও যাওয়ার সহজপথ হলো শেরপুর হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুরে যায় ড্রীমল্যান্ড পরিবহনের বাসে করে যেতে পারবেন। ভাড়া ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে। শেরপুর থেকে বাসে বকশীগঞ্জের ভাড়া ২৫-৩০ টাকা।
৩.গান্ধি আশ্রমঃ
মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাসহাটিয়া গ্রামে গান্ধি আশ্রমের অবস্থান।
৪.দারকি গ্রামঃ
মাছ ধরার বিশেষ এক ধরনের ফাঁদের নাম “দারকি”। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার হাতিজা গ্রামের নাম বদলে হয়েছে এই দারকি গ্রাম!
৫.যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানাঃ
দেশের সর্ববৃহৎ সার কারখানা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত। শেরপুরঃ
১. গজনী অবকাশ কেন্দ্র , ঝিনাইগাতি।
২. মধুটিলা ইকোপার্ক, নন্নী, নালিতাবাড়ি।
৩. অর্কিড গার্ডেন পর্যটন প্রকল্প, কলাবাগান, শেরপুর।
৪. জরিপ শাহের মাজার, বারদুয়ারি মসজিদ , গড় জরিপার দুর্গ, শ্রীবরদি, শেরপুর।
৫. হজরত শাহ কামালের মাজার ,কসবার মুঘল মসজিদ ,নয় আনী জমিদার বাড়ি, শেরপুর।
৬. সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান, ঝিনাইগাতি।
৭. বারোমারি খ্রিস্টান মিশন, নালিতাবাড়ি।
৮. নাকুগাও স্থল বন্দর, নালিতাবাড়ি।
৯. বন্যহাতির অভয়ারন্য নয়াবাড়ির টিলা।
১০.নালিতাবাড়ির বিখ্যাত রাবারড্যাম।
১১.লস্কর বারী মসজিদ (১৮০৮ খ্রিস্টাব্দ)। বিশেষ নোটঃ আমরা বগুড়া থেকে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তাই ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন তার একটা যুক্তিযুক্ত উপায় বিভিন্ন মাধ্যম দেখে ও পর্যালোচনা করে বের করেছি। তাই ভাড়া ও গাড়ীর সময়ের তারতম্য হতে পারে তবে তা সামান্যই হবে।
যাতায়াত ব্যবস্থা ও ভাড়া- বাসযোগেঃ
এডিবির আর্থিক সহায়তায় ফিডার রোড নির্মিত হওয়ায় ঢাকার সাথে জামালপুর ও শেরপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে চার ঘন্টায় জামালপুর এবং সাড়ে চার ঘণ্টায় শেরপুর পৌঁছানো যায়। ঢাকা থেকে জামালপুরের দুরত্ব ১৮০ কিঃমি এর মতো আর শেরপুরের দুরত্ব ১৯৮ কিঃমি । এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়াত খুব সহজ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে। ঢাকা থেকে এসে আপনি জামালপুর নামতে পারেন, জামালপুরের স্পটগুলো ঘুরে শেরপুর যেতে পারেন। কিংবা শেরপুর থেকেও জামালপুর ব্যাক করতে পারেন। আসলে এটা আপনার ইচ্ছা। আসলে সব বাসই জামালপুর শহর হয়ে শেরপুর যায়। বাস কোম্পানী গুলোর মধ্যে বধুয়া, শাহীমনি, সোনার বাংলা, এসএ পরিবহন ও স্পেশাল ড্রীমল্যান্ড সার্ভিস উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে এসি, নন-এসি, ডিলাক্স, সাধারণ এসবের সিট ভাড়া পড়বে ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে।
মহাখালী,আব্দুল্লাহপুর সহ ঢাকার কয়েকটি স্ট্যান্ড থেকে বাস ছেঢ়ে যায় জামালপুর ও শেরপুরের উদ্দেশ্যে। গুলিস্তান বাইতুল মোকাররম মার্কেট এর সামনে বা ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়াম গেইট থেকে সরাসরি বিকাল ৩-৪টায় বেশ কিছু ভাল বাস ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা। বেশীরভাগ বাস শেরপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যায়, আবার কিছু বাস শহরের ভেতরে নিউমার্কেট পর্যন্ত যায়। এক্ষেত্রে বাস টার্মিনাল এ নামলে রিকশা নিয়ে শহরের ভিতরে যেতে হবে,ভাড়া ১৫-২০ টাকা। অটোরিক্সা দিয়েও যেতে পারেন, ভাড়া ৫-১০ টাকা জনপ্রতি। ট্রেন যোগেঃ
ঢাকা থেকে ট্রেন যোগেও আসতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে জামালপুর এসে নামতে হবে। শেরপুর যাবার জন্য জামালপুর শহর থেকে সড়ক পথ ধরতে হবে। থাকার ব্যবস্থা ও খরচ- জামালপুর থাকতে চাইলেঃ
এখানে ভিআইপিদের জন্য জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ রয়েছে। আর আমার আপনার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ভালো,মাঝারী ও নিম্নমানের হোটেল। জামালপুরে থাকতে চাইলে জেলা শহরেই থাকা উত্তম। কারন উপজেলা গুলোতে তেমন ভালো থাকার ব্যবস্থা নাই। শহরের হোটেল গুলোতে ২ জন একরুমে থাকতে পারবেন এমন রুমের নন-এসি ভাড়া ৪০০-১২০০ টাকা, এসি ৯০০-২০০০ টাকার মতো। শেরপুর থাকতে চাইলেঃ
যদি শেরপুরে রাত্রিযাপন করতে চান তবে শেরপুর জেলা সদরেই থাকতে হবে। কারণ সীমান্তবর্তী এলাকার কোনো স্পটেই রাত্রীযাপনের কোনো ব্যবস্থা বা অনুমতি নেই। এছাড়া নিচে উল্লেখিত স্থানগুলোতে এমনকি ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ি,শ্রীবর্দী এসব সীমান্তবর্তী উপজেলা সদরে রাত্রিযাপন করার মতো কোনো ভালো আবাসিক হোটেল নেই। শেরপুর জেলা শহরে হাতে গোনা তিনটি-চারটা ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের রুম ভাড়া নন এসি ডাবল ৪০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এসি রুমের ভাড়া ৮০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। আর ভিআইপিদের জন্য জেলা সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ও এলজিইডির রেস্ট হাউজ রয়েছে। ঝিনাইগাতী ডাকবাংলো অথবা বন বিভাগের ডাকবাংলোতেও থাকতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে অগ্রীম অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজের প্রতিরুম এক রাতের জন্য ভাড়া ৫০ টাকা, এলজিইডির প্রতিরুম ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং সার্কিট হাউজের প্রতিরুম ৪০০ টাকায় ভাড়া নেয়া যায়। তবে ওই রেস্ট হাউজে সরকারি কর্মকর্তারা নামমাত্র মূল্যে দিয়ে রাত্রীযাপন করতে পারেন। খাওয়া সুবিধাঃ
জামালপুর ও শেরপুরে খাবারের সমস্যা নাই। দুটি জেলা শহরে কয়েকটি বিখ্যাত খাবার হোটেল আছে। হোটেল শাহজাহান,শাহী খানা খাজানা,বাগান বাড়ি রেস্টুরেন্ট,হোটেল আহার কিংবা হোটেল প্রিন্স শেরপুরের বিখ্যাত। আপনার সুবিধামতো খাবার খেতে পারবেন। খাবারের দাম স্বাভাবিক। শহরের বেশ কয়েকটি হোটেল অর্ডার দিলে পার্সেল সরবরাহ করে।
তবে সীমান্ত এলাকায় ভালো মানের খাবার হোটেল পাবেন না। তবে পেট চালিয়ে নেবার মতো খাবার হোটেল মাঝেমধ্যে পাবেন। অভ্যন্তরীন যানবাহনঃ
জেলা দুটির অভ্যন্তরে পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরতে সিএনজি,অটোরিক্সা পাবেন। রিজার্ভ নিলে সবচেয়ে সুবিধা হবে। বাসও চলে বিভিন্ন রুটে। একবার রিজার্ভ করলে বেশ কয়েকটা স্পট ঘুরতে পারবেন এমনভাবে পরিকল্পনা করুন। আমি এ কথাটা বারবারই বলি গাড়ী রিজার্ভ করার ক্ষেত্রে দরদাম করবেন, নইলে ঠকবেন। নিজের মতো করে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন এবং ভ্রমণ উপভোগ করুন।
ঢাকা থেকে আসা,থাকা,খাওয়া সবকিছুর সন্ধান তো দিলাম এবার আমাদের চোখে জামালপুর-শেরপুর অভিযান দেখুন!
আগেই বলেছি অামরা বগুড়া থেকে ভ্রমনে গিয়েছিলাম। তাই সড়ক পথে টাঙ্গাইল হয়ে ঘুরপথে যাবার চিন্তা মাথায় আনিনি। বেছে নিয়েছিলাম শর্টকাট রাস্তা। ওহ শুধু রাস্তা না নদীও ছিল! আমরা সারিয়াকান্দী কালিতলা ঘাট থেকে জামতৈল ঘাট হয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা সদর দিয়ে জামালপুর সদরে প্রবেশ করেছিলাম। বগুড়ার সারিয়াকান্দী উপজেলার কালিতলা ঘাট থেকে প্রতিদিন বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টায় সরকারীভাবে দুটি ফেরি সার্ভিস চালু আছে ওপাশের জামতৈল ঘাট পর্যন্ত। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা, বিশাল যমুনা নদী পার হতে সময় লাগবে দুই ঘন্টার মতো। এছাড়া দিনের অন্য সময় যেতে চাইলে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারবেন। ১৫-২০ জন হলে ভাড়া পড়বে ১০০ টাকার মতো জনপ্রতি। যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো। একটু অপেক্ষা করলেই ১৫-২০ যাত্রী হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন বিকেল ৪টার পরে কোন নৌকা বা ফেরী ঘাট থেকে ছেড়ে যায় না। কারন সন্ধ্যা বা রাতে নদী পথে নৌকা চলাচল নিরাপদ নয়। জামতৈল যমুনার পূর্বপাশে হলেও এটা বগুড়া জেলার অন্তর্গত আর মাদারগঞ্জ জামালপুরের একটি উপজেলা। জামতৈল ঘাটে নামার পর সেখানেই ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা পাবেন মাদারগঞ্জ সদরে যাবার জন্য,ভাড়া নিবে ২০-৩০ টাকা,সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মতো। মাদারগঞ্জে থাকা বা খাবারের তেমন কোন ভালো ব্যবস্থা নাই। মাদারগঞ্জ থেকে কোন বাস জামালপুর চলাচল করে না। ভরসা করতে হবে সিএনজি এবং চার চাকার হিউম্যান হলারের উপর। সিএনজিতে ভাড়া ৬০-৭০ টাকা আর হিউম্যান হলারে ৩০-৪০ টাকা নিবে।
জামালপুর শহরে পৌছাতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মতো। জামালপুরের আশপাশটা দেখে একরাত থেকে আমরা পরের দিন ভোরে রওনা হলাম শেরপুরের দিকে। জামালপুর শহরটা ব্রক্ষপুত্র নদীর তীরে। এই নদীর উপর একটা সুন্দর ও বেশ বড় সেতু নির্মিত হয়েছে,নাম ব্রক্ষপুত্র সেতু। সেতুর উপর থেকে শেরপুর যাবার জন্য বাস,সিএনজি,অটোরিক্সা পাবেন। আমরা গিয়েছিলাম অটোরিক্সায় ভাড়া নিয়েছিল ২৫ টাকা,সময় লেগেছিল ৩০ মিনিটের মতো। অটোরিক্সা শহর পার হয়ে আমাদের শাপলা চত্বরে নামিয়ে দিয়েছিল। জায়গাটার নাম সম্ভবত খোয়ারপাড়।
জামালপুর-শেরপুর ট্যুরে ভাগ্যক্রমে বেশ কয়েকজন শুভাকাঙ্খী জুটেছিল আমাদের, মূলত জামালপুর পৌছার পর তাদের ডিরেকশনেই আমরা চলেছি। ধন্যবাদ দিয়ে তাদের ছোট করতে চাই না,কারন তারা আমাদের জন্য যা করেছে তা এক কথায় অনেক,অনেক করেছে। এর মধ্যে ফরহাদ, নিজাম, গাজী এবং খায়রুলের কথা না বললেই নয়।
শাপলা মোড় থেকে আমরা সিএনজিতে করে শ্রীবর্দী গিয়েছিলাম। সময় কমই লাগে,ভাড়াও কম। বাসেও যেতে পারবেন। সেখান থেকে অটোরিক্সা রিজার্ভ নিতে পারবেন গজনী অবকাশ কেন্দ্র হয়ে মধুটিলা ইকোপার্ক পর্যন্ত। চাইলে সেই অটোতেই আবার ফিরতে পারেন শ্রীবর্দী,সেখান থেকে শেরপুর। অন্য পথেও সরাসরি ঝিনাইগাতী হয়ে গজনী আসতে ও শেরপুর ফিরতে পারবেন,এতে সময় বাঁচবে। ঝিনাইগাতী পর্যন্ত লোকাল বাসে আসতে পারবেন। আমাদের শ্রীবর্দী যাবার অন্য কারন ছিল। তাছাড়া সিএনজি, অটোরিক্সাও পাবেন। আমরা মধুটিলা ইকোপার্ক পর্যন্ত যাবার চুক্তিতে রিজার্ভ নিয়েছিলাম, ভাড়া নিয়েছিল ৮০০ টাকা। এই যাত্রা পথে আপনি অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। মসৃন উচুনিচু পিচঢালা পথ। দুপাশে বিভিন্ন গাছের ঘন বাগান,মাঝে মধ্যে উকি দেবে দুরের পাহাড়। ড্রাইভারকে বললে মাঝে মধ্যে গাড়ী থামিয়ে আপনাকে প্রকৃতির স্বাদ নিতে দেবে। চলতি পথে দেখবেন রাস্তার দুপাশে খোলা তারের বেড়া! এই বেড়া দেয়া হয়েছে রাতে বন্যহাতির আক্রমন থেকে মানুষের জান-মালকে রক্ষা করবার জন্য। রাতে এই তারে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া থাকে।
এভাবে প্রকৃতির নেশায় ডুবে থাকতে থাকতে কখন যে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে চলে আসবেন বুঝতেই পারবেন না!
টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়। গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতিতে। এখানে একই সাথে পাহাড়, হ্রদ, বন-জঙ্গল ও হাজারো পাখির কলরব পাবেন। পাহাড়ে সারি সারি শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারী, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস সহ আরো নাম না জানা হরেক রকমের পাহাড়ি গাছ, বিভিন্ন পাহাড়ি ফুল, ছায়া ঢাকা পরিবেশ পাবেন। যেন বিশাল ক্যানভাসে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়। এখানে একটি বেশ উচু ওয়াচ টাওয়ার আছে। টাওয়ারটি থেকে পুরো গজনী এক পলকেই দেখতে পারবেন, দারুন ভিউ পাওয়া যায় ওয়াচ টাওয়ারটা থেকে। অবকাশটির ভিতরে বেশ চিত্তবিনোদনমূলক বেশ কিছু আইটেম আছে। টিকিট কেটে সব উপভোগ করতে পারবেন। এমন পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন গজনী গারো পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। জেলা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত এ অবকাশ কেন্দ্রটি থেকে ভারতের মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়গুলো আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে! তবে সাবধান সীমান্তের কাছাকাছি ঘেষার চেষ্টা করবেন না, বিপদ হতে পারে,অামাদের যেতে দেয়া হয়নি। এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস,তাই তারা বিব্রত হয় এমন কাজ করবেন না। এবার মধুটিলা ইকোপার্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ!
গজনীর চেয়ে মধুটিলা ইকো পার্ক আমার ভালো লেগেছে। ভারত সীমান্ত ঘেষা নালিতাবাড়ী উপজেলায় এই পার্কটির অবস্থান। এখানেও টিকিট কেটে ঢুকতে হবে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর গাছ রয়েছে এখানে। বেশ কয়েকটি উচু উচু টিলার সমন্বয়ে গঠিত এই পার্ক,টিলাগুলো এতো সবুজ ও সুন্দর যা আপনাকে ভাষায় বোঝানো যাবে না! ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মনোরম পিকনিক স্পটটি গড়ে তোলা হয়েছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওই পিকনিক কেন্দ্রে প্রতিবছর প্রচুর ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণ হয়। এখানেও গজনীর মতো অনেক আইটেম রয়েছে,যা আপনার মনকে আনন্দিত করবে।
এখানেও সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে,এতে করে আপনি পুরো পার্কটি একনজরেই পুরোটা দেখতে পারবেন। পাহাড়ে চড়ার জন্য বেশ কয়েক জায়গায় সিড়ির ব্যবস্থা আছে। পার্কের ভিতরে অনেক জীব-জন্তুর ভাস্কর্য রয়েছে। শো-পিছ কেনাকাটা করার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। এখানে আপনি শেরপুর থেকে সরাসরি আসতে পারবেন, এজন্য আপনাকে লোকাল বাসে করে নালিতাবাড়ীর নন্নী পর্যন্ত আসতে হবে। এরপর রিক্সা বা অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি করে পার্ক পর্যন্ত আসবেন। ফিরবেন একই উপায়ে।
কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ!
এই উপদেশ গুলো গজনী ও মধুটিলা ইকোপার্ক সহ পুরো পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী এলাকার জন্য প্রযোজ্য;
১.পাহাড়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। কথা বলারও দরকার নাই।
২.একা হয়ে পাহাড়ে ঘুরবেন না। সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডের দিকে যাবেন না।
৩.মাদক কারবারি বা দালালদের থেকে দূরে-বহুদূরে থাকুন।
৪.সন্ধার আগেই পাহাড়ি এলাকার স্পট গুলো ত্যাগ করুন।
৫.স্থানীয় কারো সাথে তর্কে জড়াবেন না।
৬.মধুটিলা ইকোপার্ক ও গজনী অবকাশ কেন্দ্র বেশ নির্জন। তাই সাবধানে থাকুন। এসব স্থানে ছিনতাইয়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।
উপরে মূলত শেরপুর-জামালপুরের প্রধান দুটি পর্যটন স্পট নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি অন্য স্পটগুলোও নিজের মতো করে সময় সাজিয়ে নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। অবশ্যই ভালো লাগবে আপনার। গজনী ও মধুটিলায় প্রতিবছরের শুরুতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর মানুষ শিক্ষা সফরে আসে। তাছাড়া সারা বছরই মোটামুটি পর্যটকের আনাগোনা থাকে এখানে। এবার ফেরার পালাঃ